'অদ্বিতীয় তসলিমা নাসরিন'

প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৬, ০৪:০২

বাংলায় যে ক’জন নারীবাদী মানুষ রয়েছেন তাদের মধ্যে অদ্বিতীয় তসলিমা নাসরিন। তার অসীম সাহসী উচ্চারণ, সততা আর নিষ্ঠা দারুণভাবে আলোড়িত করে বর্তমান প্রজন্মকে। নারীদের জরায়ুর স্বাধীনতার কথা বলে তিনি নাড়িয়ে দিয়েছেন পুরো প্রথা-বদ্ধ পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থাকে।

এছাড়া, ধর্ম সবসময়ই নারী অধিকার-বিরোধী হওয়ায় তিনি বরাবরই সমাজে প্রচলিত ধর্মসমূহের কট্টর সমালোচনা করে এসেছেন। বাংলা সাহিত্যে তার মত অমন করে আর কোন নারীবাদী লেখক মানুষের জীবনে এতটা নাড়া দিতে পারেনি।

বেগম রোকেয়া যে নারীবাদের চর্চা করেছেন পুরুষ-তন্ত্রকে কটাক্ষ করে, তাচ্ছিল্য করে; তসলিমা নাসরিনের সাহিত্যে তাই-ই পরিলক্ষিত, তবে তা আরও তীব্র ক্রোধে উচ্চারণ করেছেন তসলিমা। যার ফলে তসলিমা নাসরিন মানেই নারীবাদ আন্দোলনে এক ঝড়ের নাম।

এ পর্যন্ত তসলিমা নাসরিনের অসংখ্য বই নিষিদ্ধ হয়েছে। তার যতগুলো বই এ যাবৎ নিষিদ্ধ হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন লেখকের এত-সংখ্যক বই নিষিদ্ধ হওয়ার নজির আছে বলে মনে হয় না।

তিনি আত্মজীবনীমূলক লেখা লেখেন বলে তার সেসব লেখায় সভ্য-সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে আমরা যাদেরকে চিনতাম, জানতাম তাদের ভদ্র মুখোশও বারবার খসে পড়েছে। যার ফলে আমরা দেখতে পেয়েছি ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কতগুলো বীভৎস ও কুৎসিত মুখ।

কবিতা দিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখা-লেখিতে হাতেখড়ি হলেও মুক্ত-গদ্য লিখে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। সত্য ও সাবলীল ভাষায় রচিত তার মুক্ত-গদ্য মোল্লা-তন্ত্র তথা পুরুষ-তন্ত্রের লুঙ্গি টেনে ধরেন। যার ফলে তীব্রভাবে এই শ্রেণীটা তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

বিশেষ করে সাবেক ধর্ম-মন্ত্রী রাজাকার আব্দুল মান্নানের ‘ইনকিলাব' ও ‌‘মদিনা’ আদাজল খেয়ে নামেন তসলিমার মুণ্ডপাত ঘটাতে। মূলত এই চক্রটাই তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অন্ধবিশ্বাসীদের লেলিয়ে দেন। এমনকি তৎসময় নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত ‘কাগজ’ পত্রিকা অফিসে হামলা চালানো হয় তসলিমা নাসরিনের লেখা প্রকাশের অভিযোগে। এসময় রাষ্ট্রও মোল্লা-তন্ত্রের পক্ষ অবলম্বন করে তসলিমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

এখানেই শেষ নয়, নারীবাদকে বিকলাঙ্গ করার পুরনো কৌশল অনুযায়ী পুরুষ-তন্ত্রের ধারক-বাহকরা তসলিমা নাসরিনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলতে শুরু করেন, এখনও বলে যাচ্ছেন।

তিনি একই সঙ্গে ধর্মীয় মৌলবাদীদের আস্ফালন এবং তথাকথিত প্রগতিশীলদের রক্তচক্ষুকেও সমানভাবে মোকাবেলা করেছেন। তবে পুরুষ-তন্ত্রের সকল কুৎসার পরও এক মুহূর্তের জন্যও দমে যাননি। বরং তিনি হয়ে উঠেছেন, বর্তমান বাংলা সাহিত্যের একজন সাহসী নারীবাদী, নারী জাগরণের প্রতিচ্ছবি।

তসলিমা নাসরিনের লেখায় উঠে আসে যা আমাদের চারপাশের চেনা জগতের পুরুষ ও নারীদের ভয়াবহ নারী বিদ্বেষী অন্তঃকরণ যা বাইরে থেকে বোঝাও যায়না। সমাজের সর্বস্তর ও সর্বকালের -প্রান্তিক পর্যায়ের নারী থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের নারী, পুরাণ থেকে শুরু করে পুঁজিবাদের নারী; অর্থাৎ সকল সমাজের সকল নারীর নারী-জীবনের বঞ্চনা ও অপমানের কথা ফুটে ওঠে তসলিমা নাসরিনের লেখায়।

সীমান্ত প্রধান এর ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত