মানবিকতার চেয়ে বড় ধর্ম নাই
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:১২
সারা পৃথিবীতে একটা বিষয় নিয়ে বিরাট ঝামেলা আছে, সেটা হচ্ছে- অমুক মুসলিম বিজ্ঞানী, তমুক খ্রিষ্টান বিজ্ঞানী। অমুক নারী বিজ্ঞানী, তমুক পুরুষ বিজ্ঞানী। শুনলে মনে হয় ইবনে সিনা মুসলিম বলে সারাদিন মসজিদে বসে থাকতেন, নিউটন খ্রিষ্টান বলে সারাদিন চার্চে পড়ে থাকতেন। ওপেনহেইমার ছেলে বিজ্ঞানী বলে ছেলেরা মহান, হাইপেশিয়া মেয়ে বিজ্ঞানী বলে মেয়েরা মহান! যারা এভাবে ভাগ করে ফেলে তাদের একটা গল্প শুনাতে খুবই ইচ্ছে হয়। সেটা হচ্ছে-
আইনস্টাইন একবার জাহাজে করে পদার্থবিজ্ঞানের একটা সম্মেলনে যাচ্ছেন। তখনো পৃথিবীর সব মানুষ মহাজ্ঞানী আইনস্টাইনের চেহারা-ছবির সাথে পরিচিত হয়ে যায়নি। তো, আইনস্টাইনের সাথে জাহাজের ডেকে একজনের সাথে পরিচয় হল। সেও আইনস্টাইনের মতই মাঝবয়সী। সে আইনস্টাইনকে বলল- তুমি কি করো? তোমার পেশা?
আইনস্টাইন বললেন- তেমন কিছু না। তুমি?
-আমি একটা কোম্পানিতে জব করি।
আইনস্টাইন এবার বললেন- তোমার পড়াশুনা?
-আমি ফিজিক্সে পড়েছি। তুমি?
আইনস্টাইন উদাস গলায় বললেন- আমি এখনো পড়ছি। ফিজিক্সেই!
কোম্পানিতে চাকরি করা লোকটি বিরক্ত গলায় বলল- এই বয়সেও তুমি ফিজিক্স পড়ছ? আমিতো মাস্টার্সই করেছি বিশ বছর আগে!
আইনস্টাইন কিছু না বলে হাসলেন!
অনেকদিন পর লোকটার সাথে আইনস্টাইনের দেখা হয়েছিল একটা কনফারেন্সে। আইনস্টাইনের সেখানে একটা লেকচার ছিল। লেকচার শেষে সেই ব্যক্তি আইনস্টাইনের সাথে দেখা করতে এলেন। খুবই লজ্জিত হয়ে বললেন- ক্ষমা করো আমাকে। আসলে যে যত জানে তার অজানার পরিমাণটাই তাকে বেশি ভাবায়। আর যে যত কম জানে তার জানার পরিমাণটাই তাকে বেশি আনন্দিত করে!
শেষ কথা হচ্ছে- ইবনে সিনা মুসলিম বিজ্ঞানী, কিন্তু জীবনের শেষ বছরটা তাঁকে কাটাতে হয়েছে ইস্পাহান কারাগারে। কেন জানেন? ইসলামের বিরুদ্ধাচারন করায়। ইবনে সিনার স্কুল লাইফের প্রথম প্রশ্ন ছিল- মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা কি করতেন? হাইপেশিয়া নারী বিজ্ঞানী, কিন্তু খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা তখনকার ধর্মগুরু সিরিলের নির্দেশে তাঁকে কেটে কুটিকুটি করে পুড়িয়ে দিয়েছিল। কেন জানেন? তাঁর বিজ্ঞান লেকচার খ্রিষ্টান ধর্মের বিরোধী বলে!
মানুষকে ধর্ম দিয়ে বিচার করতে গেলে কেবল ভেজালেই পড়বেন। কারণ- মানবিকতার চেয়ে বড় ধর্ম আর নাই। আর মানুষের জন্য ভালো কিছু করার মতন আনন্দের কর্মও আর নাই। সেরকম কিছু করেছেন কি?
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি'র ফেসবুক থেকে