স্বাধীনতা আদায় করে নিন, সগৌরবে
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৪৫
প্রিয় পাঠক,
চলুন আমাদের বাঙালি পুরুষদের কিছু সুমহান কীর্তি দেখে নেই। এগুলো সবাই জানেন, তবুও একটু রিভাইস দেই।
সাকিব আল হাসানের স্ত্রী কেন শাহরুখ এর সাথে ছবি তুলল এ নিয়ে নোংরা মন্তব্য।
মুশফিকের স্ত্রী কেন দেখতে বয়ষ্ক এই নিয়ে কটুকথা।
ফেসবুকের "আদার" ইনবক্সে প্রত্যেকটা মেয়েকে নোংরা, কুৎসিত প্রস্তাব দেয়া।
একটা মেয়ে অবিবাহিত থেকে ক্যারিয়ার গড়লে তাকে বেশ্যা বলা, কাজে ছেলেদের চেয়ে ভাল হলে তার সাফল্যকে বসের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের ফসল বলে প্রচার করা।
মেয়ে বিবাহিত কি অবিবাহিত যাই হোক না কেন, একা পেলেই ইনিয়ে বিনিয়ে বা সরাসরি কুপ্রস্তাব দেয়া।
ধর্ষণ হলে তার দায় ধর্ষিতার উপর চাপানো, "মেয়ের কাপড় ঠিক ছিলোনা" বলে দাবী করা।
কোন মেয়ে এ্যাডভেঞ্চারাস পেশা বেছে নিলে তার অর্জনকে খাটো করা ( ওয়াসফিয়া বা নিশাত আপুর ওয়াল দেখতে পারেন চাইলে)
আমি আমার বত্রিশ বছরের জীবনে এমন কোন বাংলাদেশী মেয়েকে দেখিনি যে তার জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এ্যাবিউজের শিকার হয়নি। এর মধ্যে আমার মা, বোনও পড়ে।
আর চাকুরির সুবাদে যেটা হয়েছে, মোটামুটি "ফেমিনাজি" তে পরিণত হয়েছি। আমার জায়গায় আপনি থাকলে, আমি যা যা দেখছি সেগুলো আপনিও দেখলে আমার মতই অবস্থা হত।
এই দুহাজার ষোলতে এসেও আমরা গৃহপালিত, সাত চড়ে রা নেই এমন মেয়ে খুঁজি। এ্যাথলেটিক্স, পুলিশিং, মিলিটারি বা এ ধরণের চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোতে যে মেয়েরা আসে, তাদের কি কি ফেইস করতে হয় কল্পনা করে নিতে পারেন।
ঢাকায় মেয়েদের একটা ম্যারাথন হয়েছে, এটা নিয়েও লোল ফেলা পুরুষের দল কুৎসিৎ সব মন্তব্য করেছে।
মার্জিত, হৃদয়বান পুরুষ অতি অবশ্যই আছে। তবে এনারা সংখ্যালঘু এবং কোনঠাসা। বেশিরভাগ বাঙালি পুরুষ কেমন তা বুঝতে উপরে যেসব উদাহরণ দিলাম , একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্গারিটা মামুন রাশিয়ার হয়ে গোল্ড জিতেছেন। তাঁর এই সাফল্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি দেহে বাঙালি রক্ত বহন করেন, এ থেকে প্রমানিত হয় যে আমাদের শারীরিক কোন দুর্বলতা নেই। উপযুক্ত ট্রেনিং পেলে আমরাও বিশ্বের যে কোন খেলায় সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারি। মিডিয়াতে তাঁর এই সাফল্য নিয়ে মাতামাতিটা শুরুতে একটু অদেখলাপনা বলে মনে হলেও এটাকে আমি পজেটিভলি দেখতে চাইছি। হোক রাশিয়ার হয়ে, আমাদের রক্ত বহন করা একটা মেয়ে অলিম্পিক গোল্ড জিতেছে এটা কম কি!
এবার স্পেসিফিক আপত্তির জায়গাটা বলি। আপত্তিটা হচ্ছে হিপোক্রেসিতে। এই একটা জায়গায় আমরা বাংলাদেশিরা সম্ভবত আজীবন গোল্ড মেডেল পাব।
বাজি লেগে বলতে পারি, মার্গারিটা বাংলাদেশে থাকলে তাঁকে তাঁর পোশাকের জন্য দুর্গন্ধময় সব মন্তব্য শুনতে হত। তিনি বাসে করে প্রাকটিসে যাবার সময় তাঁর দেহে অশ্লীল ভাবে হাত দিত কোন বীর বঙ্গপুঙ্গব। বিয়ে না করে অলিম্পিক প্রস্তুতি নেবার জন্য তাঁকে শুনতে হত "খারাপ মেয়ে" ডাক। "এমন বেহায়া কাপড় পরা মেয়েরে ঘরের বউ করা যায় নাকি" বলে বানী দিত শ্বাশুড়িসমাজ। স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রূমে তাঁর উপর চড়াও হত কোন মধ্যবয়ষ্ক, বিবাহিত উচ্চপদবীধারী। এই এত কিছু পেরিয়ে তিনি যদি শেষমেষ বিদেশে কোন প্রতিযোগিতায় যেতেনও, বিনিময়ে আকারে ইঙ্গিতে পেতেন শয্যাসঙ্গী হবার অফার। "এইসব জিমন্যাস্টিক্স করলে বাচ্চা নিতে সমস্যা হবে, ছেড়ে দে" বলে নসিহত করত আন্টিসমাজ আর খেদা হাতির দল।
যত ভালই হতেন তিনি, তাঁর পেছনে থাকতোনা কোন স্পন্সর, থাকতোনা কোন আন্তর্জাতিক মানের কোচ , থাকতনা ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি।
তাঁকে বিন্দুমাত্র সুযোগ তো দেই নি, বরং বাংলাদেশের হয়ে খেলার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছি। আর আজ তিনি যখন গোল্ড মেডেল জিতেছেন, তখন এসেছি তাঁর গৌরবে ভাগ বসাতে। শেইম অন আস!
বাংলাদেশ মেয়েদের জন্য একটা বিভীষিকাময় দেশ। যতদিন না এই পরিবেশ পাল্টাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কোন মেয়ে মার্গারিটার মত অলিম্পিক পদক জিতবে এটা ভুলে যান।
সত্যি সত্যি বিশ্বব্যাপী গৌরব চান? আপনার মেয়ে, বোন, প্রেমিকা, স্ত্রীকে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশ পেতে সহায়তা করুন। কেউ তাদের এ্যাবিউজ করলে চেপে না গিয়ে প্রতিবাদ করুন।
আর মেয়েরা, আপনাদের কারো সহায়তার দরকার নেই। পরিশ্রমের কলম, ইচ্ছের কালি আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার দোয়াতে নিজেই লিখুন নিজের ভাগ্য।
স্বাধীনতা কেউ কাউকে দেয়না, ওটা আদায় করে নিতে হয়।
আদায় করে নিন, মাথা উঁচু করে, সগৌরবে।
জাগো গো বাঘিনী!
মাসরুফ হোসেন এর ফেসবুক থেকে