দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের বিচারহীন এক বছর
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০১৬, ২০:০২
‘এক বছর ধরে আদালতে ঘুরেও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। চলে যাওয়া একটি বছরেও আমার মেয়েকে হত্যা করার আসামীদের সঠিক বিচার পাইনি। আসামিরা জামিনে বের হয়ে উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। আমার আরও দুটি মেয়ে রয়েছে তাদের স্কুলে দিতে ভয় পাই। সবসময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি। আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার মেয়েকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের কঠিন বিচার চাই, আমি তাদের ফাসিঁ চাই, যেন আর কোন পরিবারের সাথে এরকম না করতে পারে।’
মাদারীপুরে চাঞ্চল্যকর দুই স্কুলছাত্রী হ্যাপি ও সুমাইয়া ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় এক বছর হয়ে গেলেও বিচার পায়নি অসহায় এই দুই পরিবার। নিহত হ্যাপীর মা ও মামলার বাদী মুক্তা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে এভাবেই আকুতি জানান মেয়ে হত্যার বিচারের।
মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন আসামিদের হুমকির মুখে, এমনটা দাবি করে মুক্তা বেগম আরও বলেন, প্রধান আসামীরা জামিনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
এর আগে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় থানায় এক মাস ঘুরেও কোনো কূলকিনারা পায়নি অসহায় পরিবার দু’টি। এ ঘটনার শুরু থেকেই থানায় মামলা গ্রহণে পুলিশ নানাভাবে হয়রানি করেছে। নিহতদের পরিবার পরে বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলো।
কিছুদিন পরে প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে শান্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু কিছুদিন জেল খেটে আসামিরা আদালতের জামিন নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ও দেশে থেকে পালিয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। তারা বলেন ‘আমরা দ্রুত হ্যাপি ও সুমাইয়ার হত্যার বিচার চাই। এক বছর হয়ে গেল আজও আমরা কোন বিচার দেখতে পেলাম না। আসামিরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের যদি বিচার না করে এভাবে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেয়া হয় তবে এমন আরও ঘটনা ঘটতে পারে, আমরা চাই এরকম ঘটনা যেন আর কোন পরিবারে না ঘটে।’
জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। যদি নিহতদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় থাকে, আমি সঠিক বিচারের জন্যে পিপির মাধ্যমে চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ আগস্ট স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাদারীপুরের মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুই স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ শেষে নির্যাতন করে বিষ খাইয়ে হত্যা করে বখাটেরা। পরে ওই দুই শিক্ষার্থীকে সদর হাসপাতালে ফেলে রেখে বখাটেরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার আসামিরা হচ্ছে রানা নার্গাসী (২১), মেহেদী হাসান (২০), সিপন শিকদার (২০), রফিকুল ইসলাম দরজী (২০), উজ্জ্বল শিকদার (২৫), রকিব শিকদার (২১), আলামিন হাওলাদার (২০) ও সাজন বেপারী (২০) এর মধ্যে দুই একজন বাদে বাকিরা আদালতের জামিন পেয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং একজন পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে। বর্তমানে মামলা দুটি সিডিআই এর কাছে রয়েছে।