যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের বর্জন করুন
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১১
একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিনা; আমার কলিজা দিন দিন শুধু ছোটই হচ্ছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে আমার সাহস দিন দিন কমে ভীতুর আন্ডা হয়ে যাচ্ছি। এক সময়ে যেসব মারামারি - কাটাকাটির খবর, ছবি হাঁ করে গিলেছি, এখন সেসব দেখা তো দূরের কথা শুনতেও পারিনা।
পৃথিবীর যেকোন নৃশংসতার খবর দেখলে গা গুলায় এখন। আমার বন্ধুবান্ধব পরিজন যারা ফেসবুকে এই খবরগুলো শেয়ার করে, তাদের অনুরোধ করি বারেবারে যাতে তারা সেই ছবিগুলো- সেই ভিডিওগুলো- সেই যন্ত্রণাময় বর্ণনাগুলো না শেয়ার করে।
গত কয়েক বছরে সারা বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া প্রায় সবগুলো নৃশংসতার ভিডিও বা তথ্যচিত্র রয়েছে, অনেক পরিচিতজন শেয়ারও করেছেন - কিন্তু মাঝেমাঝে আমি বুকে দম নিয়ে দেখতে বা পড়তে শুরু করলেও বেশিক্ষণ সেসব জিনিস দেখতে বা পড়তে পারিনি - সম্ভব হয় না আমার পক্ষে।
কিন্তু এই ভীতুর আন্ডা আমি - কলিজা ছোট আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত যেকোন নৃশংশতার খবর বা ভিডিও কেউ কোথাও প্রকাশ করলে আর সেটা চোখের সামনে পড়লে বা পড়ার সুযোগ থাকলে বুকে সাহস জমিয়ে খু্ঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার চেষ্টা করি - খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করি।
আমার স্মৃতিশক্তি মাছের মতো, তাই অনেক খবরই একাধিকবার পড়ি বা দেখি - যাতে পরে রেফারেন্স হিসাবে কোথাও ব্যবহার করতে পারি। এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে বা ভিডিওগুলো দেখতে গিয়ে প্রায় কখনোই শুকনো চোখে উঠতে পারিনি।
এই সময়ে এসে আমাদের 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' শব্দটি যখন প্রায় গালি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলেই শুধু গঁৎবাধা তোতাপাখির মতো "৩০ লাখ শহীদ (তাও যুক্তিতর্ক - পরিসংখ্যান দিয়ে এদেশের মানুষের কাছে প্রমান দিতে হয়) আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা"-তে গিয়ে ঠেকেছে তখন আমি আসলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি বা পড়তে চাই কিভাবে সেই ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, কি হয়েছিল যখন ২ লক্ষ (আসলে তারচেয়ে বেশি) মা বোন মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে ধর্ষিত হয়েছিল।
এই ৩০ লক্ষ/ ২ লক্ষ এগুলো এখন আমাদের কাছে আসলে শুধুমাত্র কিছু সংখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ৩০ লক্ষ শহীদের কোন একজনের মৃত্যুর সামনে দাঁড়ানোর সেই মুহুর্ত কি আমরা কখনো অনুভব করতে পেরেছি? কখনো কি পেরেছি সেই ২ লক্ষ মা বোনের মাঝ থেকে অন্তত একজনের কষ্টের পরিমান অনুভব করতে?
সোজা উত্তর পারিনি। পারিনি বলেই এতো বিভেদ আমাদের মাঝে।
এই সংখ্যা হতে পারতো আরো অনেক অনেক কম। কিন্তু সেটা হয়নি কেবলমাত্র এদেশীয় রাজাকার-আল বদর-আল শামসদের জন্য - সরাসরি এবং খোলাখুলি বললে জামায়াতে ইসলামী নামক ধর্মের ব্যবসায়ী কীটগুলোর জন্য।
আমি ঝাপসা চোখে সেই অবর্ণনীয় নৃশংশতার কথা পড়ি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে- ধর্মের নামে কি অধর্মই না করেছে এই নরপিশাচরা! আমি তাই আমার পরিচিত সবাইকে বলি, যখন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কোন ঘটনা বলবেন বা লিখবেন, যত পুঙ্ক্ষানুপুঙ্খভাবে সম্ভব, সেই বর্ণনা দিবেন- যাতে আমরা সেই লেখা পড়েই, সেইসব মহান মানুষদের কষ্ট অন্ততঃ অনুভব করতে পারি; আর বুঝতে পারি জামায়াতের সেই নরপিশাচদের পৈচাশিকতার মাত্রা!
কিছু কিছু দিন থাকে, যেসব দিনে বাংলাদেশ নিয়ে কোন কিছু লেখা যায় না - হাত নড়তে চায় না!
কিছু কিছু দিন থাকে, যেসব দিনে বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলা যায় না - কষ্টে গলা বুজে থাকে!
কিছু কিছু দিন থাকে, যেসব দিনে বাংলাদেশ নিয়ে কিছু মনে করা যায় না - কষ্টে মনটা ভারী হয়ে থাকে!
আজ এমনই একটা দিন। ১৪ই ডিসেম্বর এমনই একটা দিন।
'১৪ ডিসেম্বর' বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবাহমান ট্রাজেডির নাম।
এই জামায়াতে ইসলামী সেদিন পাকিস্তানিদের সাহায্য না করলে, আমাদের সূর্য সন্তানেরা আজো অনেকে আমাদের মাঝে থাকতেন! এই দেশটা অনেক আগেই উন্নত দেশের তালিকায় থাকতো। তাই ঘরে-বাহিরে-নির্বাচনে সর্বত্র এই যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের বর্জন করুন, সে যেই মার্কাতেই নির্বাচন করুক! বাংলার আকাশ থাকুক শকুন মুক্ত।
ভালোবাসায় ভালো থাকুক জাতির সেকালের সকল সূর্য সন্তানেরা, মমতায়-সম্মানে মিশে থাকুক আমাদের গভীরতম নিঃশ্বাসে, দুর্দিনের প্রেরণায়- ঘুরে দাঁড়ানোর বিশ্বাসে। করুণাময়ের অপার করুণায় থাকুক আমাদের সূর্য সন্তানেরা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা আমাদের সূর্য সন্তানদের জন্য।
জাগরণীয়ার ইনবক্স থেকে