বাংলাদেশে মি_টু: সোচ্চার হলেন শেঁউতি

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:২২

জাগরণীয়া ডেস্ক

কোথাও নিভু নিভু আগুনে জ্বলছিল যৌন হয়রানির এক ক্ষত। কী দেশ কী বিদেশ। সমগ্র নারী জাতি নিপীড়নের কথা বলতে একসঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে গেলো মি_টু বটবৃক্ষের তলে। ছোট্ট একটা আন্দোলনের বারুদ ছিল মি_টু, কীভাবে যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো। অন্তর্জালের কল্যাণে সবাই জানলো এরকম একটি আন্দোলন হচ্ছে। কবে বাংলাদেশে কেউ মুখ খুলবে সেই আশায় হয়তো ছিল অসংখ্যজন। বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যবসায়ির স্বরূপ উন্মোচন করে এগিয়ে আসা প্রিয়তির হাত ধরে যেন শক্ত ভীত খুঁজে পেলো বাংলাদেশে মি_টু আন্দোলন। এবার সেখানে নিজের নিপীড়নের কথা তুলে ধরলেন ভয়েস আর্টিস্ট শেঁউতি শাহগুফতা। অভিযোগ তুলেছেন সিসিমপুরের মিউজিক ডিরেক্টর এজাজ ফারাহ এর বিরুদ্ধে। 


১৪ নভেম্বর (বুধবার) ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ভয়েস আর্টিস্ট শেঁউতি। তার স্ট্যাটাসটি এখানে দেয়া হলো- 


একবার এক জেন্ডার রিলেটেড ওয়র্কশপে গ্রুপ ডিসকাশনের বিষয় দেয়া হলো 'কবে প্রথম আপনারা বোধ করলেন যে আপনি নারী বা পুরুষ অথবা কবে বুঝলেন আপনার শরীর নারীর বা পুরুষের শরীর'. মজার বিষয় হলো ছেলেরা সকলেই তাদের অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বয়ঃসন্ধিকালীন অভিজ্ঞতা বা প্রথম স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা. এবং প্রত্যেকটা ঘটনা শুনেই আমরা হেসে উঠলাম।। অপরদিকে আমরা মেয়েরা যখন গ্রুপে কথা বলছিলাম তখন খেয়াল করলাম আমরা সবাই নিজেদের নারী রূপ সম্পর্কে জেনেছি বা বুঝেছি যে এই শরীর পুরুষ থেকে আলাদা যখন রাস্তায় বা মার্কেটে বা কোচিং এ এমনকি বাসায়, বিভিন্ন 'পুরুষ' আমাদের গায়ে হাত দিয়েছে অথবা বিভিন্ন উপায়ে তাদের যৌনাঙ্গে আমাদের স্পর্শ নিয়েছে। অর্থাৎ আমাদের যৌন নিপীড়ন করেছে।আমার মনে হয় সকল নারীরই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে।
FYI যৌন নিপিড়ন শুধু রেপ না. কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছা ব্যতিরেকে গায়ে হাত দেয়া, কোন বস্তু দিয়ে স্পর্শ করা বা যৌন বিষয়ক কটুক্তি করা এমন সবকিছুই যৌন নিপিড়ন. #metoo দিয়ে আমিও লিখতে চাই। যেহেতু ছোটবেলার সব ঘটনাগুলো রাস্তাঘাটে ঘটা তাই তাদের চেহারা বা পরিচয় কিছুই জানিনা, তবে যারটা জানি তার চেহারা উন্মোচন করতে আর দেরী করতে চাইনা। 

#metoo

তার নাম এজাজ ফারাহ। তিনি বিবাহিত, দুই বাচ্চার বাপ।

প্রফেশনে আমি একজন ভয়েস আর্টিস্ট. কণ্ঠশিল্পী. বিভিন্ন ডক্যুমেন্টারি, টিভিসি, ওভিসিতে ভয়েস দেই। সেই সুবাদের প্রথম চাকরীপ্রাপ্তি। আমাদের এক কলিগ ছিলো. সে পেশায় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার্। মিউজিকও করে। আমি চাকরীতে জয়েন করার এক মাস পরই সেই অফিসের অনেক এমপ্লয়ির চাকরী চলে যায় কোম্পানী লসে চলছে এই কারণে।

যাই হোক। তার সাথে আমার যোগাযোগ থেকে যায় কারণ আমি তার সাথে ফ্রীল্যান্স অনেক ভয়েসের কাজ করেছি আর আমাদের দুইজনেরই মিউজিকের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে তাই। তিনি আমাকে প্রায়ই বলতেন আমাকে নিয়ে গানের কাজ করার একটা বিশাল প্ল্যান আছে তার. যাই হোক। তার স্টুডিও পান্থপথে, আমার বাসার খুব কাছে। তাই অনেক সময় অফিস করে, থিয়েটারে রিহার্সেল শেষ করে রাত ১০-১১টার দিকে তার স্টুডিওতে যেতেও আমার কখনো দ্বিধাবোধ হয়নি।

বেশীদিন আগের কথা না। তিনি আমাকে ডাকলেন একটা কাজের জন্য। সেদিন একটা ব্যক্তিগত কারণে আমার মন খুব খারাপ ছিলো। আমি কোনভাবেই ঠিকমতো ভয়েস এক্টিংটা করতে পারছিলাম না। পরে তিনি বললেন চল একটা ব্রেক নেই। এবং ব্রেকের মাঝে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আমার? মন খারাপ কেন। আমাকে বল, আমিতো তোর বন্ধুর মতোই। আমি তার সাথে বিষয়টা শেয়ার করে এক পর্যায়ে খুব ইমোশনাল হয়ে কেঁদে দিলাম। তখন তিনি আমাকে 'আহারে এভাবে কাঁদেন। তুইনা সাহসী মেয়ে. আমার ফাইটার বাচ্চাটা। আয়।' এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

জড়িয়ে ধরার দুই সেকেন্ডের মধ্যেই আমি টের পেলাম তার হাতের চাপ আমার পিঠে বেড়েই চলেছে এবং তার নিঃশ্বাস ভারী হওয়ার শব্দ টের পাচ্ছি। প্রচন্ড অস্বস্তিতে আমি তাকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু তার শক্তির সামনে যেন আমার শক্তি কিছুইনা। আমি সজোরে এক ধাক্কা দিলে সে আমাকে বললো 'আরেহ এটাতো আদর এতে কোন কাম নেই বিশ্বাস কর বাবু।' এই বলেই তিনি আমার মুখ চেপে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু দিলেন। আমি এবার আবারো ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হলাম। আর বললাম আমি বাসায় যাবো। স্টুডিওর দরজা খুলেন। তিনি আমার হাত ধরতে চাইলেন আমি তার গালে কষে এক চড় মারলাম, তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম। তারপর স্টুডিও থেকে বের হয়ে আসলাম। বেহায়া লোক এই বছর আমার জন্মদিনেও আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, লিখেছেন তিনি আমাকে খুব মিস করেন।

তিনি পান্থপথে নিজের একটা স্টুডিও চালান। মিউজিক করেন। সিসিমপুরের মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। একসময় স্ক্রিপ্টের কাজও করতেন।

ভয়েস আর্টিস্ট শেঁউতির স্ট্যাটাসটি সরাসরি পড়তে চাইলে নিচে ক্লিক করুন-

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত