শিশুকে মাতৃভাষা বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:৫৪
শিশুর প্রথম ভাষা শিক্ষা শুরু হয় মায়ের কাছ থেকে। প্রথম বুলি সে শেখে মায়ের কাছেই। তারপর দ্বিতীয় ভূমিকা পালন করে চারপাশের পরিবেশ। যে শিশুটি যে পরিবেশে যে ভাষা ব্যবহার করে বড় হয়ে ওঠে সেটাই তার মাতৃভাষা। যেমন আদিবাসীদের ভাষা বাংলা ভাষা থেকে আলাদা। ওটা ওদের মাতৃভাষা। তাই বাংলা ভাষা চর্চার জন্য ওদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখতে হয়।
এই বিষয়ে প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ বলেন- “শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। স্কুলে যখন তার মাতৃভাষায় যেমন কোন নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠীর ভাষায় কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন পরিবারকেও নিজের ভাষা বাদ দিয়ে আধুনিক বাংলায় কথা বলতে হয়। সেই ক্ষেত্রে তার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। বাংলা ভাষা চর্চার সাথে সাথে নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চাও অক্ষুন্ন রাখতে হবে। এখানে মুখ্য বিষয় মাতৃভাষা চর্চা। সেটা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই।”
বর্তমানে শিশুদের মাতৃভাষা চর্চার প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনার প্রতি বাবা মায়ের জোর দেওয়া, ইংরেজী গল্প বা কবিতা শিখানো এগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তথাকথিত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ অনুষদের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক স্যার তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে বলেন- “মাতৃভাষার প্রতি শিশুদের অনীহার কারণ খোঁজার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের মাতৃভাষার প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরী করা। তার জন্য মাতৃভাষার বেশি বেশি চর্চার জন্য সার্বিক বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত পরিবারের ব্যাপক ভূমিকা এবং তারপর বাংলা গল্প-কবিতার বই, শিশুদের বাংলা নাটক, সিনেমা এগুলো দেখার প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দ্বিতীয়ত দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, আচার- সংস্কৃতির সাথে যত বেশি সম্ভব শিশুদেরকে সম্পৃক্ত করে তুলতে হবে।”
সর্বোপরি একটি শিশুকে নিজ ভাষা, নিজ সংস্কৃতির সাথে যে বন্ধন রয়েছে সেই অনুভূতিগুলো তার মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। তাহলেই যে সংগ্রামের বিনিময়ে, এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে যে মাতৃভাষা আমরা পেয়েছি তার মর্যাদা আমরা রক্ষা করতে পারব এবং প্রত্যেকের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।
জাগরণীয়ার ইমেইল থেকে