শেফালীর গল্প
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:১৮
অক্টোবর আসলেই কেমন মন খারাপ চেপে ধরে, বিকেল হলে তা বাড়তে থাকে। আর এই মানসিক অবস্থা চলতে থাকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর নতুন বছরে নতুন করে শুরু হয় জীবনের আয়োজন। এই আয়োজনে নতুন অন্তর্ভুক্তিই জীবনে আলোর পথ দেখায়, বেঁচে থাকতে শেখায়।
কোন এক জানুয়ারি মাসের কথা। তখন এতো শীত ছিল না, যতটুকু ছিল তা সহনীয় পর্যায়ের। সাত বছরের শেফালী শাহবাগের সিগন্যালে ফুল বেচে। গোলাপি রঙের মলিন একটা ফ্রক পরে আছে। খালি পা, মাথায় দুটি ঝুঁটি বাঁধা, মুখে এক টুকরো আলোকিত হাসি। ফুল বিক্রি করে সংসার চালায় এই ছোট্ট মেয়েটি। বাবা ছেড়ে চলে গেছে তার মাকে। একটি ছোট ভাই আছে, আর মায়ের যে কী অসুখ করেছে জানে না! ডাক্তার দেখবার টাকা নেই, মায়েরও কাজ করার শারীরিক শক্তি নেই। কাজেই সাত বছর বয়সের শেফালীর ওপর সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব। মায়ের জন্য ফার্মাসি থেকে ব্যথার ঔষধ, চাল, ডাল, আলু, নুন সব তাকেই কিনতে হয়। সাত বছরের ছোট্ট মেয়েটা ছয় মাসে কেমন বড় হয়ে যায়, সাতাশ বছরের দায়িত্ব পালন করে!
মাঝে মাঝে বড় বড় মানুষেরা বিশ/ত্রিশ টাকার জন্য গায়ে হাত তোলে। মা কখনও মারেনি, পথের এ অভিজ্ঞতা তার নতুন। বাড়ি ফিরে মাকে এসব বলে না, আড়াল করতে শিখে যায় ধীরে ধীরে। মানুষের তাচ্ছিল্য, বিরক্তি সব সয়ে যায় জীবনের কাছে। এত কঠিন সময়েও ভালো লাগা আছে তার জীবনে, যখন মা একটু সুস্থ থাকে, চুলে তেল দিয়ে বিনুনি করে দেয়, তখন খুব ভালো লাগে তার।
কিছু স্বপ্ন আছে এই ছোট্ট মেয়েটির, মাকে একজন ভালো ডাক্তার দেখাবে, আসছে বছর ভাইকে স্কুলে ভর্তি করাবে আর পরের ঈদে একটা লাল ফ্রক কিনবে। এসব স্বপ্নেরা দীর্ঘশ্বাসে চাপা পড়ে, পূরণের চেষ্টা চলে। কিন্তু, দুই অক্ষরের একটি শব্দ 'ভাত' তার আড়ালে স্বপ্নেরা হয় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত!
সামর্থ যাদের আছে, তারা কিন্তু অনায়াসেই পারে শেফালীদের ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণের হাত ধরতে।
'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে'....
আসমা খুশবুর ফেসবুক থেকে