তবু তো এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৪৮
ফেসবুকে যে ভদ্রলোকের বাচ্চাসহ ছবিটা ভাইরাল হয়েছে, তিনি বাঙালি না। ছবিটা মেক্সিকোর এবং তার ক্যারিয়ারে ঝুলানো বাচ্চাটা তার না। বাচ্চা তার ছাত্রীর। ছাত্রী হাইস্কুল শেষ হওয়ার পর পরই মা হয়ে যাওয়ায় তার উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। তাই শিক্ষক ভদ্রলোক ছাত্রীর বাচ্চাকে ক্যারিয়ারে ঝুলিয়ে ক্লাস নেন যাতে মেয়েটা নির্বিঘ্নে ক্লাস করতে পারে।
এই ঘটনা এই দেশে ঘটার সম্ভাবনা কম, না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রথমত, এই দেশে বাচ্চা হইলে সেই বাচ্চা যেমনে পারে ম্যানেজ করে ক্লাস করবা, না রান্ধবা, না স্বামীরে দেখবা, না শপিং যাবা নাকি রেস্ট নিবা, পুরা দায়িত্ব মায়ের।
দ্বিতীয়ত, বাচ্চা হইসে, পড়তে যখন এতই অসুবিধা হয়, পড়া ছেড়ে দ্যাও, মাইয়া মানুষের অ্যাত লেখাপড়া ক্যারিয়ারের কী? মাতৃত্ব মহান....ব্লা ব্লা ব্লা...
তৃতীয়ত, শিক্ষক এই ছাত্রীর বাচ্চা ক্যান নিসেন? ডাল ম্যায় কুচ কালা হ্যায়...(বাচ্চার চেহারা অনেকটা ওই শিক্ষকের মতন)!
আমার কলেজে একজন শিক্ষক ছিলেন, তার কাছে শুনতাম তার জীবনের গল্প। আর্মি অফিসারের সাথে বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। স্বামী চাইতেন না তিনি লেখাপড়া করুন। নানাভাবে বাধা দিতেন। ভদ্রলোক ও বাচ্চারা ঘুমালে মহিলা বাথরুমে ঢুকে পড়তেন। ইকোনমিক্সে অনার্স মাষ্টার্স করেছিলেন তিনি। গল্পটা বলার সময় চোখের কোনে পানি চিকচিক করতো মিসের।
এইদেশের অধিকাংশ মেয়েকেই চরম মূল্য দিতে হয় পড়াশোনাকে উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে তা সফলভাবে শেষ করতে। নানান রকম চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়। তারপরও এইদেশে এখন জিপিএ ফাইভে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের কৃতিত্ব চোখে পড়ার মত। প্রতিটা পেশায় মেয়েরা এগিয়ে আসছে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের সিনসিয়ারিটির প্রশংসা করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এইসব মেয়েদের পিছনে মেক্সিকোর ওই হৃদয়বান মহৎ শিক্ষকের মত তেমন কেউ নেই। থাকলেও হাতে গোনা। বরং আছে আমার এক সাবেক অফিসের ছোটলোক বসদের মত লোকেরা, যারা মাতৃত্বকে নানাভাবে অপমান করে করে মেয়েদের ক্যারিয়ারের পথে পাথর বিছিয়ে রাখে। তাদের মাথায় এটা ধরে না যে, প্রতিভা এবং দক্ষতাকে পাথর বিছিয়ে বাধাগ্রস্থ করা যেতে পারে, কিন্তু তা পাথর চাপা দিয়ে রাখা যায় নাহ!
শারমিন শামস্ এর ফেসবুক থেকে