কেউ সুখে থাকে, কাউরে ভূতে কিলায়

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪৩

গতকাল কলেজের ক্লাসের পর প্রাইভেট লেসন ছিল। ম্যানচেস্টারের এক অভিজাত পাড়ায় নদীর পাড় ঘেঁষা এক অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের কাঁচের জানালার পাশে বসে ধনী ছাত্রীকে কম্পারেটিভ ডিগ্রি পড়াচ্ছিলাম।

ছাত্রীর পরিচারিকা ঘর দোর গোছাচ্ছে, পরিষ্কার করছে, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে কার্পেট পরিষ্কার করতে গিয়ে শব্দে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। ছাত্রীটি সদ্য বিবাহিত, বাচ্চাকাচ্চা নেই। হাত পা ঝাড়া নির্ঝঞ্ঝাট জীবন তার, ঘরেও কুটোটি নাড়াতে হয় না।

ঝকঝকে গোছানো ফ্ল্যাট, নিয়মিত রান্নাবাড়ার কারণে আমদের বাসাবাড়িতে ঢুকলেই যেমন একটা পুরোনো ময়লা হাঁড়ির মত গন্ধ পাওয়া যায়, তা নেই। আমি বললাম, 'তোমার বাসাটা খুব সুন্দর, গন্ধটা খুব ফ্রেশ।' বলল, বাসা নোংরা হয়ে যাবে বলে রান্নাবাড়া তেমন একটা করে না। বেশিরভাগ সময় রেস্টুরেন্টেই খাওয়া হয়, মাঝে মধ্যে টেকএওয়ে।

উদাহরণ হিসেবে তুলনামূলক বাক্য লিখতে গিয়ে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এল, 'ফারহা'জ ফ্ল্যাট ইস ক্লিনার দ্যান জেসমিন'স হাউস। জেসমিন ইজ মোর হার্ডওয়ার্কিং দ্যান ফারহা। ফারহা ইজ লেস ইন্ডিপেন্ডেন্ট দ্যান জেসমিন। ফারহা ইজ রিচার দ্যান জেসমিন। বাট ইজ ফারহা হ্যাপিয়ার দ্যান জেসমিন?' হা হা হা।

আমার বাক্যগুলো পড়ে ছাত্রীও হেসে ফেলল। তার মতে যেসব মেয়েরা শিক্ষিত এবং খেটে খায় তাদের চেয়ে যেসব মেয়েদেরকে কিছু করতে হয় না, তারাই বেশি সুখী। তার খালা সারাজীবন চাকুরী করেছেন বলে সহজে পয়সা খরচ করতে পারে্ন না, গায়ে লাগে। পক্ষান্তরে তার মা স্কুলেও যাননি, জীবনে এক পয়সা রোজগারও করেননি কিন্তু তিনি ভাল কাপড় চোপড় পরেন, অবলীলায় স্বামীর পয়সায় বড় সাইজের ডায়মন্ড কিনেন। আমার ছাত্রীর মতে তার খালার চেয়ে মা ই বেশি সুখী।

পড়ানোর ফাঁকে জীবনের গল্প হচ্ছে। সুন্দর সুবাসিত ঘরটিকে পরিচারিকার হাতে আরো সুন্দর আর পরিষ্কার হয়ে উঠতে দেখছি। আর চোখে ভাসছে নিজের রান্নাঘরের সিংকের পাশের স্তুপিকৃত ময়লা হাঁড়িবাসনগুলো। ভীষণ ক্লান্ত থাকায় টেবিলের উপরের খাবারগুলো পর্যন্ত আগের রাতে ফ্রিজে ঢোকানো হয়নি। ভোরে ঘুম ভেঙ্গেই কাজে ছুটতে হয়েছে। বাসায় ফেরার পথে আজ বাজার করতে হবে। আগের দিনের বাসী তরকারি কিছুটা রয়ে গেছে তবু আজ আবার কিছু রান্না করতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দম ফেলার ফুরসত মিলবে না আজো। তবু মনে অনেক আনন্দ। আজ শুক্রবার, কাল ভোরে কাজে ছুটতে হবে না, যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুম!

এই সপ্তাহটা খুব ঝামেলায় গেছে। হাঁটতে যাওয়া হয়নি, জিমে যাওয়া হয়নি, আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ হয়নি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসবাজি হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রতিশ্রুত লেখাগুলো জমা দেয়া হয়নি। আগামীকাল সারাদিন নাটকের রিহার্সেল। আজকের দিনটাই শুধু একটু অবসর। কিন্তু লিখতে বসতে ইচ্ছেই করছে না। এভাবে ভূতে কিলালে সুখে থাকব কেমন করে, বলতে পারেন?

জেসমিন চৌধুরীর ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত