নারীবাদী সমাজে অচ্ছ্যুত কেউ নন
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০০:০৮
নারীবাদ, নারীবাদী, এই শব্দগুলোকে অনেকেই আজকাল অত্যন্ত হাস্যকর, এবং উপহাস হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু এটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন কেন একজন মানুষকে বিশেষ শ্রেণী বা গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলতে হয়?
যখন কেউ আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলেন তাকে বলা হয় আদিবাসী নেতা। শ্রমিক সংগঠনের নেতাকে শ্রমিকনেতা বললে তিনি গর্বিত হন। ধর্মিয় বিষয়ে বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে ধর্মপ্রণেতাও বলা হয়। এতে বিভূষিত ব্যক্তিগণ কখনই লজ্জিত বা সংকোচিত হন না।
কিন্তু নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন, বা নারী অধিকার বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানকারী ব্যাক্তিবর্গকে নাকউঁচু ভদ্রলোকেরা বিশেষ নজরে দেখে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। যেন ওনারা অচ্ছ্যুত কোন জাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন।
কিন্তু এ কথাটা ভেবে দেখেছেন কি, যদি সমাজে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তথাকথিত ভদ্রলোকেরা, উদারনৈতিকতা, মানবতাবাদী হতেন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে মানুষ ভাবতেন তাহলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় বলে একটা বিশেষ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন হতো কি?
গর্তের ভিতরে ইঁদুর রেখে মাটি চাপা দিয়ে যেমন শস্য রক্ষা করা যায় না তেমনি ভিতরে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা চেপে রেখেও সাম্যবাদী, মুক্তমনা হওয়া যায় না।
মনকে কলুষতা মুক্ত করে দেখুন, নারীবাদীরাও মানুষের জন্যেই কথা বলেন, যাদেরকে সামাজিক শৃঙ্খলা, বিধি রক্ষার নামে, মিথ্যা প্রলোভনে যুগের পর যুগ ধরে অন্তঃপুরবাসিনী বানিয়ে জগৎসংসারের আলো থেকে বঞ্চিত করে রাখছেন।
সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেক আমরা পরের তরে, এই বোধটি যেদিন প্রতিষ্ঠিত হবে, যেদিন সকল মানুষ সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ পাবে, সেদিন নারীবাদ, নারীবাদী শব্দগুলোও তার প্রয়োজনীয়তা হারাবে।
সেই অনাগত সুখের দিনের আকাঙ্ক্ষায়।
মেহনতি জনতার জয় হোক।
স্বপ্না দে'র ফেসবুক থেকে