তসলিমা নাসরিন কি যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও বড় অপরাধী?
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ২১:৪০
পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই যখন ফ্রান্সের মানবাধিকার সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘সগারভ প্রাইজ’ পেলো, আমাদের মিডিয়া তখন মালালার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেলো! অথচ তারা একটিবারও ছাপলো না- মালালার আগে এই পুরস্কার পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশীর নাম- তসলিমা নাসরিন!
তসলিমা নাসরিনকে যখন মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার জন্য ফ্রান্সের সগারভ পুরস্কার দেওয়া হলো তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একটা চিঠি পাঠালেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার প্রদানের পর সেই চিঠিটা তসলিমার হাতে দিলেন। চিঠিতে লেখা ছিল- তসলিমা নাসরিনকে যেন কিছুতেই এই পুরস্কার না দেওয়া হয়!
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট অবাক হয়ে বললেন- এর আগে কোনো দেশ তাদের একজন নাগরিককে এতো বড় পুরস্কার না দিতে কখনো সুপারিশ করেনি!
আমি একদিন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার একটা নাম আছে, নামটা হচ্ছে- ছোটো তসলিমা! এই নামটা কে বা কারা দিলো আমি সেটা জানি না, কিন্তু নামটা কেন দিলো সেটা আমি আন্দাজ করতে পারি! এই নামটা দিয়েছেন কতিপয় সাহিত্য সম্পাদক, নারীকে আলাদা কিম্ভূতকিমাকার জন্তু ভাবা কিছু লোক। এক সাহিত্য সম্পাদক রসিকতা করতে করতে জিজ্ঞেস করেছিলেন- তসলিমা তো ‘ক’ লিখেছে, আপনি কি ‘খ’ লিখবেন নাকি? আমি তাকে বললাম- দরকার পড়লে নিশ্চয়ই লিখবো!
আমি ধর্ষণ নিয়ে লিখি বলে, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করি বলে একদল লোক আমাকে ডাকে ‘যৌন লেখক’। আমি নানারকম পুরুষ বন্ধুদের সাথে সহজে মিশি বলে আড়ালে অবডালে আমাকে নিয়ে অনেক কথাই হয়- সেও আমি ভালোই জানি।
এই যেমন বইমেলার মধ্যে এক জোব্বা পরা লোক এসে শাসিয়ে গেলো- ‘প্রেমিক’ উপন্যাসটা লেখার কারণে আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। ‘নারীর নাড়ি’ বইয়ে ভাইরাস নামের একটা অধ্যায় আছে- ওটা ফেলে দিতে হবে। এমনকি ‘উনিশ বসন্ত’ বইটা কেন অভিজিৎ রায়কে উৎসর্গ করা হলো, এজন্য আমার পাশাপাশি আমার প্রকাশককেও মৃত্যুর হুমকি পেতে হয়েছে!
সেই গণজাগরণ মঞ্চের সময় থেকে শুরু হয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। এরপর নানাসময়ে নানা কারণে নানাভাবে মৃত্যুর হুমকি, হিটলিস্ট...ইত্যাদি এবং ইত্যাদি!
আমি তসলিমার সমস্ত কথায় ‘হ্যাঁ’ বলি না, আমি তাকে পূজা করি না। কিন্তু তার যে ওই প্রতিবাদী সত্ত্বাটা আছে- ওটাকে আমি শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। ব্যক্তি তসলিমার চেয়ে লেখক তসলিমা অনেক বেশি শক্তিশালী, সেটা আমি জানি। তসলিমার কথায় আমি তর্ক করি, একমত হই, অনেক সময় হই না। কারণ বাক স্বাধীনতা মানে অন্যের খারাপ লাগার কথাও শুনতে পারার সহনশীলতা।
তসলিমা নাসরিন মানুষ খুন করেননি, তবুও তাকে দেশে আসতে দেওয়া হয় না। কেন? দেশ তো যুদ্ধাপরাধীকেও বিচারের সুযোগ দিয়েছে, তসলিমা কি তার চেয়েও বড় কোনো অপরাধ করেছে?
তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে চূর্ণী গাঙ্গুলি বানিয়েছিলেন নির্বাসিত। ‘নির্বাসিত’ ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। সেখানে একটা লাইন ছিল এরকম- কলম আর অস্ত্রের যুদ্ধে তুমি হারবে নিশ্চিত, কিন্তু তুমি যদি সত্য লেখো, তাহলে সেটা টিকে থাকবে। কারণ- অস্ত্র দিয়ে নারী ও লেখক দুইই খুন করা যায়, সত্যকে না!
শুভ জন্মদিন তসলিমা নাসরিন!
তোমার জন্মদিনে তোমাকে কথা দিচ্ছি- পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, I will always fight for the rights, I will always write for the rights!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতির ফেসবুক থেকে