অসহিষ্ণুতা বুঝতে হলে সংখ্যালঘুর জায়গায় দাঁড়ান
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৭, ০২:২৩
আমার মৌলিক অধিকার কি করে কারোর ব্যক্তিগত মানসিকতা কিংবা ধর্মীয় অনুভূতির লক্ষ্য হতে পারে!? আমি কী খাবো সেটা কি করে অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে!?? আমার খাওয়ার জন্য কি করে কেউ আমায় কুপিয়ে খুন করতে পারে!??
আমার ধর্ম অন্যান্য ধর্ম থেকে ভালো, আমার ধর্মে যা পূজনীয় সেটাকে অন্য ধর্মের মানুষেরও পূজো করতে হবে। সবাইকে আমার ধর্মটাই মেনে চলতে হবে, আমার চিন্তাধারাগুলোই সাবস্ক্রাইব করতে হবে, নইলে শালা তোমাকে ক্যালাবো, প্রকাশ্যে হিউমিলিয়েট করবো, তোমাকে খুন করবো - এই ধরনের মানসিকতাই হলো অসহিষ্ণুতা।
এই মুহুর্তে ভারত সবচেয়ে অসহিষ্ণুতম দেশ। গোটা বিশ্বে চতুর্থ। শুধু যে ধর্মকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে, তা নয়, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ, বিধিনিষেধ আরোপ ও ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক অস্থিরতার ঘটনাও সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বেড়েছে জাতি বা বর্ণ ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা, হিংসা, সাম্প্রদায়িক হিংসা, ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাস। গত তিন বছরে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের ছবিটা আরো স্পষ্ট হয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ও দাঙ্গার একাধিক ঘটনা ঘটছে। যার সংখ্যা গত ক'বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
শুধু মুসলিমরাই নয়, হিন্দুদের মধ্যেও এই হেনস্থা, নির্যাতন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে নিম্নবর্ণের জনগোষ্ঠীর ওপর। যাদের মধ্যে পড়েন দলিতরা। সমীক্ষা বলছে, তাদের বিভিন্ন সরকারি চাকরি পেতে বাধা দেয়া হচ্ছে, সরকারি পদে তাদের প্রোমোশন রুখে দেয়া হচ্ছে, পর্যাপ্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর বর্তমান পরিসংখ্যান মতে, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, হেনস্থার সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন দলিত নারীরা। অপরাধীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো বিচারই হচ্ছে না। শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা!!
এই মুহুর্তে যারা বিরোধিতা করে বলবেন, আমাদের দেশ কোনোমতেই অসহিষ্ণু নয়, দেশে শান্তি আর সহিষ্ণুতা বিরাজ করছে, তাদের বলি, অসহিষ্ণুতা কি, সেটা দেখতে হলে আপনাকে সংখ্যালঘুর জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে হবে। যতক্ষণ না সেই জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে পারছেন, ততক্ষণ আপনার চারপাশে সবকিছু শান্তিময় মনে হবে! আপনাকে চুরাশি সালের দিল্লীতে একজন শিখের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে হবে, নব্বই দশকের একজন কাশ্মিরী পন্ডিতের জায়গায় দাঁড়াতে হবে, একজন সাধারণ মুসলিম, দলিত, আদিবাসী'র জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে হবে! আপনাকে নাস্তিক হতে হবে ধর্মবিশ্বাসীদের ভিড়ে, দেশজোড়া মোদী-ওয়েভের মধ্যে দাঁড়িয়ে মোদীর দিকে আঙুল তুলতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে বর্তমান দেশের অসহিষ্ণু পরিস্থিতিতে তার ভূমিকার কথা নিয়ে, প্রশ্ন তুলতে হবে গুজরাট দাঙ্গায় তার ভুমিকা নিয়ে, তবে বুঝবেন অসহিষ্ণুতা কাকে বলে!!
সুমনা চৌধুরীর ফেসবুক থেকে