দিনাজপুরের একমাত্র জাদুঘরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৯:২০
স্থান স্বল্পতা, জনবলের অভাব আর সংস্কারের অভাবে দিনাজপুর জেলার একমাত্র জাদুঘরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল জাদুঘরটি জাতীয়করণে বার বার বাধা প্রদান করায় জাদুঘরটি এতদিনেও জাতীয়করণ করা হয়নি। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জাদুঘরটি। ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে জাদুঘরটিকে জাতীয়করণের আবারও জোর দাবি জানিয়েছে জেলার সচেতন জনগণ।
১৯৬৮ সালে নরওয়ের একটি সংস্থার অর্থায়নে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জাকারিয়া এর সার্বিক সহযোগিতায় দিনাজপুর শহরে মুন্সিপাড়ায় জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়। এখানে রয়েছে কান্তজীউ মন্দির, দিনাজপুর রাজবাড়ী, চেহেলগাজী, নয়াবাদ মসজিদ, সুরা মসজিদ, ঘোড়াঘাট দূর্গসহ বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক নিদর্শন। আরো রয়েছে মাটির নিচে প্রাপ্ত হাজার বছর আগের মূল্যবান কষ্ঠি পাথরের মূর্তি এবং তাম্রপত্র, তালপাতার লেখা রামায়ণ, মহাভারত এবং পুঁথিসহ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।
যেখানে প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ জন স্টাফ সেখানে জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাত্র ৩ জন স্টাফ রয়েছে। যা দিয়ে জাদুঘরটির রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না, জানান জাদুঘরের গাইড শওকত আলী। তিনি জানান, স্থানীয় ছিনতাইকারী ও নেশাখোরদের ভয়ে এখানে কোন দর্শনার্থী আসে না। আমরা তাদের ভয়ে কিছুই বলতে পারি না।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানের অভাবে কান্তজীউ মন্দিরের কিছু ভাঙ্গা নিদর্শন মেঝেতে পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে কামান ও কষ্ঠি পাথরের ৩ টি স্তম্ভ বাইরে খোলা আকাশের নিচে প্রায় ২ দশক ধরে পড়ে থেকে ধ্বংস হলেও দেখার কেউ নেই। প্রচারের অভাবে দিনাজপুর জাদুঘরটির কথা অনেকেই জানেন না। ভুতুড়ে ও ভয়ংকর পরিবেশ থেকে জাদুঘরটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেলে অবশ্যই দর্শনার্থী প্রচুর হবে বলে জানান কবি মমিনুল ইসলাম।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ও খাজা নাজীমউদ্দিন মুসলিম হল ও পাবলিক লাইব্রেরীর ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরীয়ান মিজানুর রহমানের তত্বাবধানে ও একটি কমিটির মাধ্যমে এই জাদুঘরটি পরিচালনা হয়ে থাকে। গোটা তিনেক দোকান ভাড়া এই জাদুঘরের আয়ের উৎস।
তবে জাদুঘরটির উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা জানালেন তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান। তিনি আরো জানান, জাদুঘরটি শীঘ্রই স্থানান্তরিত করে দিনাজপুর রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যেখানে জাদুঘর পরিদর্শনের ফি বাবদ ২০ টাকা নেওয়া হবে দর্শনার্থীদের নিকট। এ ব্যপারে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এম.পি সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাদুঘরটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার এ প্রত্যাশা দিনাজপুর জেলাবাসীর।