সচেতনতাই প্রতিরোধ করবে স্তন ক্যান্সারের
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২০:০৬
বিশ্বজুড়ে অক্টোবর মাস পালিত হয় ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা’ মাস হিসেবে। ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সচেতনতার অভাবেই দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া নারীদের চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। সচেতনতার অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেরিতে ধরা পড়ে ক্যান্সার। যখন চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার আর তেমন কোনও সম্ভাবনা থাকে না, তখন চিকিৎসকের কাছে আসেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন ঝুঁকি বা ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’সর্ম্পকে যদি সচেতন করা যায় মানুষকে , তাহলেই কেবল স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে অনেক কিছু করা সম্ভব। সে কারণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করা।
স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আর নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এ অসুখের লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব। এ সময় চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেকটাই। এতে শারীরিক কষ্ট এবং চিকিৎসা খরচ দুটোই কমে যায়।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাসকে কেন্দ্র করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) প্রকাশিত এক জরিপ থেকে দেখা যায়, সারাবিশ্বের মতো যে কোনও রোগের মধ্যে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার এক নম্বরে। আবার নারী-পুরুষ মিলিয়ে হিসাব করলে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হারেও এক নম্বরে অবস্থান করছে এই রোগ।
প্রতিবছর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, ১৪ হাজার ৮২২ জন। আর মারা যায় ৭ হাজার ১৩৫ জন। সেই হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জন নারী নতুন করে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৯১ হাজার ৩৩৯ জন।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বৈশ্বিক অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে আমাদের দেশের সরকারও। চলতি বছরেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা কলম্বো ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। এই ঘোষণায় ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের পরিস্থিতির তীব্রতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে এইসব রোগের সেবাপ্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতায় আনা, স্ক্রিনিং ও কাউন্সিলিং সেবা নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। আর এ জন্য বৃদ্ধি করতে হবে পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পাশে থাকতে হবে। তাকে ভালোবাসা-মায়া দিয়ে আগলে রাখতে হবে।’
স্তন ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠা এবং ‘অপরাজিতা সোসাইটি অ্যাগেইনস্ট ক্যান্সার’ সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ তাহমিনা গফুর বলেন, ‘নারীদের স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার প্রধান বাধা সচেতনতা এবং গোপনীয়তা। লোকলজ্জা, সমাজের ভয় এ রোগ শনাক্তে নারীদের মূল প্রতিবন্ধকতা।’ তিনি বলেন, ‘এমনও দেখেছি, সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে মেয়েরা মরণব্যাধি এই অসুখের কথা বলতে ভয় পান। এই ভয় জয় করতে হবে নারীদের। শরীরের অন্য আর দশটা অসুখের মতোই এটাও একটা অসুখ। চিকিৎসা করালে এটি ভালো হয়, এই বোধটা সবার জন্য জরুরি; বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়টা জানা খুবই জরুরি।’
তাহমিনা গফুর বলেন, ‘সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার রুখতে’।