‘আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনে সতর্কতার পরামর্শ’
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৩০
আত্মহত্যার সংবাদ প্রকাশের পর আত্মহত্যার প্রবণতা যেন বেড়ে না যায় সেজন্য সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ওয়ার্কশপ অন রেসপন্সিবল রিপোর্টিং অব সুইসাইড ফর মিডিয়া প্রফেশনালস’ শীর্ষক এ এক কর্মশালায় এ পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কর্মশালায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ২০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
তারা বলেন, আত্মহত্যার খবর ফলাও করে প্রকাশ না করে, এমনভাবে প্রকাশ করা, যাতে এর দ্বারা কেউ প্রভাবিত না হয়। আলোচকরা বলেন, আমাদের দেশে আত্মহত্যাকে এখনো অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। আসলে এটিকে অপরাধ ইস্যু হিসেবে না ধরে এটিকে স্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আত্মহত্যার সংবাদ কেমন হবে, সে সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার বরাত দিয়ে ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিরোনামে যেন এমন কোনো বার্তা না থাকে যাতে মনে হয়, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান। সংবাদটি প্রথম পৃষ্ঠায় বা অন্যত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকাশ করা যাবে না। শিরোনামে এমন কোনো শব্দ বা বাক্যরীতি ব্যবহার করা উচিত নয় যা পাঠক বা দর্শককে উদ্দীপনার খোরাক দেয়। আবার এমনভাবেও প্রকাশ করা যাবে না যে আত্মহত্যা একটি স্বাভাবিক মৃত্যুমাত্র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. হাসিনা মমতাজ বলেন, পাঁচটি প্রথম শ্রেণির পত্রিকার কয়েক মাসের ৬২টি ঘটনার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ কেসে এমন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে আত্মহত্যাকে সমাধান হিসেবে দেখানো হয়েছে। ৭৩ শতাংশ কেসে লোকেশন উল্লেখ করা হয়েছে। ৬২টির মধ্যে ১০টি কেসে ছবি বা ভিডিও দেখানো হয়েছে। এসব নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যেও মিডিয়ার ইতিবাচত দিকগুলো হচ্ছে- কয়েকটি প্রতিবেদনে এর প্রতিরোধে কোথায় যেতে হবে, কারা কাজ করছে, প্রতিরোধের উপায় তুলে ধরা হয়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, আত্মহত্যার ঝুঁকিতে ১ নম্বরে কৃষক, দুই নম্বরে চিকিৎসকরা। বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। বছরে করে ৮ লাখ। ২০২০ সালে এই সংখ্যা হবে দ্বিগুণ- প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মোহিত কামাল বলেন, নিজের আশপাশের মানুষগুলোর মনে খবর রাখতে হবে। যারা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কাউন্সিলিং করে আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ব্যাপারে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে সংবাদ পরিবেশনের পরামর্শ দেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুখ আলম বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে এ ধরনের আলোচনা বেশি বেশি হওয়া দরকার। যত বেশি আলোচনা হবে, সবাই তত বেশি এ সম্পর্কে জানবে। জানলে সচেতন হবে। আর সচেতন হলে প্রতিরোধও বাড়বে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, আত্মহত্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই অল্প বয়সী এবং প্রায় ৮৯ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১০ থেকে ৩৯.৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। আামদের দেশে নারী, কম বয়সী ও বিবাহিতদের মধ্যে আত্মহত্যা বেশি হয়ে থাকে। গলায় দড়ি ও বিষপান আত্মহত্যার অন্যতম প্রদ্ধতি। ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, শুধু বিষপান আর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার ঘটনা ১০ হাজার ১২৯টি। বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। এদের বেশিরভাগের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সিলিংয়ের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে একটি হটলাইন চালুর দাবি জানিয়েছেন আলোচকরা।