রোমেল হত্যার বিচার ও সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৩১
রাঙামাটির নানিয়ারচর সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থী রোমেল চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে তার ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৬ এপ্রিল (বুধবার) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে সাধারণ জুম্ম শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পাহাড়ের মানুষদের একরকম অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তাদরে বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাঙালীদের পুণর্বাসিত করা হচ্ছে। এর ফলে পাহাড়িরা দিন দিন কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। তাদের চাষের জমি কমে যাচ্ছে। তাদের বসবাসের জায়গা কমে যাচ্ছে।’
রোমেল চাকমার ‘হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা ওখানে দেখতে গিয়েছিলাম। গত ১৯ এপ্রিলের রোমেল চাকমা নামে নানিয়ারচরের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে স্থানীয় বাজার থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে বেধড়ক মারধর করে। তাকে নির্যাতন করে মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রহণ করেনি। অবশেষে চট্রগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা দিয়েও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি।’
তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ৩১ ধারা উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, সমান সম্মান ও নিরাপত্তার কথা থাকলেও আমাদের পাহাড়ি বন্ধুদের মৌলিক অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। যদিও একসময় পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছিল এই কারণেই ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করা হয়। সেই শান্তি চুক্তির কোনো ধারায় বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যার ফলে পাহাড়ে শান্তি আসছে না। অর্থাৎ তাদের মৌলিক অধিকাগুলো দেওয়া হচ্ছে না।’
এসময় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই বাহিনীর একজন সদস্য রোমেল চাকমাকে প্রচণ্ড নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা চাই সমতলের মতোই প্রতিটি পাহাড়ি নাগরিক, প্রতিটি সন্তান বেড়ে উঠবে। সমান সুযোগ, শিক্ষা ও সহযোগিতা পাবে এবং এই দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে জীবন-যাপন করবে। কিন্তু আমাদের পাহাড়ি বন্ধুরা সে অধিকার পাচ্ছে না। আমরা তাদের সেই অধিকার দেওয়া জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ সময় রোমেল চাকমাসহ যতগুলো ‘হত্যাকাণ্ড’ ঘটেছে সবগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
রোমেলকে ‘হত্যা’ করে হাসপাতালে যখন নিয়ে আসা হলো এবং তার লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো এবং পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল দিয়ে লাশটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে যা অত্যন্ত অমানবিক। যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলে দাবি করা হয়।
হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অরুণ বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাসেল চাকমা, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতোব, ছাত্র ইউনিয়ন রাবি শাখার সভাপতি এম শাকিল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি লিটন দাস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি দীপেন চাকমা।
প্রসঙ্গত গত ৫ এপ্রিল নানিয়ারচরের ট্রাক পোড়ানো ও বাস লুটের ঘটনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোমেল চাকমাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। আটকের পর রোমেল চাকমা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু ঘটে।