৩৩% ছাত্রীর দৃষ্টিতে অনিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:২২
দেশের ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর (ছাত্রী) দৃষ্টিতে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে অপমানজনক ছবি ও লেখা থাকে। স্কুলে নিরাপত্তা রক্ষী থাকে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এমন কি বহিরাগতদের দ্বারা তারা নির্যাতিত হয়। আর স্কুলে যাতায়াতের পথে তাদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) পরিচালিত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২৮ নভেম্বর (সোমবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা নিরসনে নিরাপদ স্কুল ও নিরাপদ সমাজ’শীর্ষক পরামর্শ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের সমন্বয়কারী ফয়সাল বিন মজিদ।
মূল প্রবন্ধে ফয়সাল বিন মজিদ বলেন, বিএনপিএস গত তিন বছর ধরে ইউএন ট্রাস্ট ফান্ডের সহায়তায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা ও কুষ্টিয়ার ৮০টি স্কুলে নিরাপদ স্কুল নিরাপদ সমাজ’নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের শুরুতে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি মেয়ে শিক্ষার্থী তাদের স্কুল, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথ, কোচিং সেন্টার এবং স্কুল সংলগ্ন এলাকা তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে মনে করে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা গণতন্ত্র, নারী-পুরুষ সমতা ও মানবাধিকারের অন্তরায়। তাই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নির্যাতিত হবে এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে সরকার এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পাঠ্যসূচিতে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রত্যেক স্কুলে কাউন্সিলিং ও নারী শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনওমেন-এর দেশীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টার বলেন, নারীরা ঘরে-বাইরে যৌন নির্যাতনসহ নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির কারণে তাদের স্বাভাবিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে। তিনি যৌন নির্যাতন বন্ধে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলার আহ্বান জানান।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বেড়েছে উল্লেখ করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহনওয়াজ দিলরুবা খান বলেন, এখন উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতনের প্রকটতা, ধরন ও সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে হবে। জুড়ো-ক্যারাতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধে পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে আরো জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয় অন্তভুক্ত করতে হবে। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রিন্সিপাল স্বপন কুমার ঢালি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য মো. মশিউজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর সালমা আখতার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর সুফিয়া বেগম, নায়েমের উপ পরিচালক রিয়াদ চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ফারহানা হক, ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মহসীন রেজা, বিএনপিএসের উপ পরিচালক শাহনাজ সুমী, রায়েরবাজার স্কুলের শিক্ষার্থী কান্তা মাহজাবীন প্রমূখ।