এসো পা বাড়াই (৫ম পর্ব)
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৪০
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
আভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতাগুলো কদাচিৎ আলোচনায় আসে এবং এটাকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়। কর্মক্ষেত্রের অসাম্যের কথা আর পরিবার এবং কর্মজীবন একসাথে রক্ষা করা যে কত কঠিন তা আমাকে সারা জীবন ধরে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু আমি খুব কমই শুনেছি কি উপায়ে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি সে সম্পর্কে। এই আভ্যন্তরীণ বাধাগুলো অনেক বেশী মনোযোগ প্রাপ্য কারণ এগুলো আমাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে। আমরা আজকেই নিজেদের মধ্যের এই বাধাগুলো ভেঙ্গে ফেলতে পারি। এটা এই মুহুর্তেই শুরু করা যায়। আমি কখনো ভাবিনি যে বই লিখবো। আমি কোন পন্ডিত ব্যক্তি নই অথবা সাংবাদিক বা সমাজ বিজ্ঞানীও নই। শত শত নারীদের সাথে আমি কথা বলেছি, তাদের সংগ্রামের কথা শুনেছি, আমার নিজেরটা বলেছি এবং বুঝতে পেরেছি আমাদের যে অর্জন তা যথেষ্ট নয়, এমনকি অনেক বেশী সুপ্তাবস্থায় রয়েছে - এর পরেই আমি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এই বইয়ের প্রথম অধ্যায় টি সাজানো হয়েছে নারীরা যেসব জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সেসব নিয়ে। পরবর্তী প্রতিটি অধ্যায়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আমরা কিভাবে নিজেদেরকে সমন্বয় বা পরিবর্তন করতে পারি তার উপর: আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ('টেবিলে বস'), বাড়িতে আরো বেশী কাজে সঙ্গীকে পাওয়া ('সঙ্গী হবে সত্যিকারের অংশীদার'), অসম্ভব মানদন্ডে নিজেকে বিচার না করা ('সবকিছু করা’র রূপকথা')। এই গভীর এবং জটিল সমস্যার প্রকৃত সমাধান দিয়ে দেয়ার ভান আমি করছি না। আমি নির্ভর করছি প্রচুর তথ্য-উপাত্ত, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা, আমার নিজের পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার উপর যা এই দীর্ঘ পথে আমি পেয়েছি।
এই বই কোন স্মৃতি কথা নয়, যদিও আমার জীবনের গল্প এখানে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এটা কোন “আত্ম-সহায়তামূলক” ('Self-help') বই না, যদিও আমার আশা এটা সত্যিই সাহায্য করবে। 'পেশা ব্যবস্থাপনা' ('Career management') এর উপর লেখা কোন বইও এটি নয়, যদিও এ বিষয়ে পরামর্শ এখানে রয়েছে। এটি কোন নারীবাদী ম্যানিফেস্টো নয় - আবার হয়তো একধরণের নারীবাদী ম্যানিফেস্টো, যেই ধরণটা আমি আশা করছি নারীর সাথে সাথে একইরকম ভাবে পুরুষকেও অনুপ্রাণিত করবে।
যে বই-ই হোক না কেন, আমি সেই সব নারীদের জন্যই এটা লিখছি যারা তাদের কাজের ক্ষেত্রে শীর্ষে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে চায় অথবা প্রবলভাবে কোন লক্ষ্য অন্বেষণ করছে। জীবন এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন ধাপে থাকা সমস্ত নারীরাই এর অন্তর্ভুক্ত - যারা মাত্র শুরু করেছে, আবার যারা বিরতি নিয়েছিল এবং আবার শুরু করতে চায়, সেইসব নারীরাও। আমি সেইসব পুরুষদের জন্যও লিখছি যারা নারীকে বুঝতে চায়। বুঝতে চায় একজন সহকর্মী, স্ত্রী, মা অথবা কন্যা কে, যাতে সেইসব পুরুষরা একটি সমান পৃথিবী তৈরীতে তার অংশটুকু সম্পাদন করতে পারে।
(চলবে...)