ছোটগল্প: সমবেত সঙ্গীত
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৫৩
ঘটনাটা শুরু হয় বাবার অফিসের শেষ দিনে। মানে, রিটায়ারমেন্টের আগে যেদিন বাবার অফিসের শেষ দিন। তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়া কিংবা হুট করে ‘কাজ নেই কাজ নেই’ ধরনের শূন্যতা বোধের ব্যাপারে আমরা চিন্তায় ছিলাম। তাই বাবার আগেই বাসায় ফিরি। সবাইকে আগে আগে ফিরতে দেখে মা খুশি না অবাক, বোঝা যায় না। তবে কোনো প্রশ্ন করেন না, বরং বলেন, ‘যাক, আজ থেকে মানুষটা ইচ্ছামতো ঘুমাতে পারবে। ঘুমানোর শখটা তার এই বয়সেও যায়নি।’ মায়ের কথা শুনে খুশি হব নাকি ঘুমানোর চেয়ে বাবা অফিসে যেতে বেশি পছন্দ করত, এই নিয়ে তর্ক করব বুঝতে পারি না। তা ছাড়া, ‘তোর বাবা বেরিয়ে গেলে এটা করব ওটা করব’ মায়ের এই জাতীয় কাজকর্মের কী হবে তা নিয়েও আমরা ভাবনায় পড়ে যাই। মৌনতা দেখে মায়ের হয়ত আমাদেরকে ক্ষুধার্ত বলে মনে হয়। নির্ভেজাল বিকেল কাটানোর অভ্যাস ভুলে তিনি বেসন গুলে ফুলকপি ডুবিয়ে পাকোড়া বানানোর আয়োজন করেন। ভাজাপোড়ার গন্ধে আমাদের জিভে জল আসে। ডাকাডাকির আগেই গরম গরম পাকোড়া টপাটপ তুলে নিই। ‘মুখ পুড়বে’, মায়ের চিৎকারটা মাঝপথে থেমে যায় কারণ তখন দরজা ঠেলে আমাদের পাশে বাবা এসে দাঁড়ান। মায়ের বদলে চিৎকার করে ওঠেন বাবা, ‘এসব কী খাচ্ছ তোমরা?’ বাবাকে বিস্মিত দেখায়। ধোঁয়া ওঠা তেল চুকচুকে পাকোড়া যেন জীবনে প্রথম দেখছেন। আমাদের হা করা মুখগুলো স্বাদ না পেতেই বন্ধ হয়ে যায়।
‘ভরা সন্ধ্যায় তোমরা এইসমস্ত ভাজাপোড়া খাচ্ছ, অ্যাসিডিটিতে ভুগে ডাক্তারের কাছে দৌড়াবে, তারপর গাদাখানেক অ্যান্টাসিড...।’ আমরা বাবার রাগি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। হাতের পাকোড়াকে বাটিতে ফেরত পাঠাই। বাবা বাটি ধরে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন। বাবার হয়ত রিটায়ারমেন্টের অনুষ্ঠানের প্রভাবে মেজাজ বিগড়ে আছে। এইসমস্ত অনুষ্ঠানে যা নয় তাই বলে মানুষের সুনাম গাওয়া হয়, তবু এরকম হবার কারণ আমাদের মাথায় ঢোকে না। আমরা মনমরা হয়ে থাকি। খানিক পরে শোবার ঘর থেকে আওয়াজ আসে, ‘এরকম লুঙ্গি কি পরা যায়? রঙের গন্ধ বেরোচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, রঙের মধ্যে নাইট্রিক অ্যাসিড দেয়া। এসব কাপড়চোপড় ফেলে দাও।’ কড়কড়ে লুঙ্গি ছুঁড়ে ফেলার আওয়াজ পেলেও মায়ের মিনমিনে মন্তব্য আমাদের কানে পৌঁছতে পৌঁছতে বাতাসে মিলিয়ে যায়।
থমথমে সন্ধ্যা পেরোলে আবারো রাতের খাওয়ার টেবিলে আমাদের দেখা হয়। বাবার মনের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা কথাবার্তা বন্ধ রাখি। বাটি ভরা কই মাছ বাবা যথারীতি ময়লার ঝুড়িতে ফেলেন।
‘কোন অপদার্থ কিনেছে এই মাছগুলো? সস্তা পেলেই কিনে আনতে হবে? এগুলো চাষের কই। কী খাইয়ে বড়ো করে জানো? ...অন্য প্রাণীর নাড়ি-ভুঁড়ি-গু-মুত। প্লেটে দিলে ওইসমস্ত জিনিস খাবে তোমরা?’ আমরা ডানে-বামে মাথা নাড়ি; নিশ্চয় খাবো না। তবে আমরা বরাবর একজোট, কে কিনেছে কারো মুখ থেকে তা বেরোবে না। আমাদের নীরবতায় বাবা বলে চলেন, ‘তাছাড়া, এসব মাছে কতবার ফরমালিন ঢালা হয় সে খেয়াল আছে? যেখানে ধরা পড়ে সেখানে একবার, পাইকারি বিক্রির সময়ে একবার, কাঁচাবাজারে আরেকবার, আর বড়ো দোকানে কিনলে...’ হাজার কথার পরে বাবা একটাই উপসংহার টানেন তা হলো, আমরা আসলে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার একটা পদ্ধতি বেছে নিয়েছি। তা না-হলে জেনেশুনে এসব ছাইপাশ গিলতে যাব কেন? মাছশূন্য টেবিলে ডাল-ভাত-সবজির দিকে আমরা হাত বাড়াই। বাবা বলেন, ‘এই ডাল কি মানুষের খাদ্য নাকি পশুর, নিশ্চিত হচ্ছ কী করে? অস্ট্রেলিয়া থেকে একবার ভেচ এনে মসুর ডাল বলে খাইয়েছিল, মনে আছে?’ আমরা বাবার কথায় উপর-নিচ মাথা নাড়ি। বাবা বলেন, ‘চিন্তাও করতে পারবে না এই সবজিগুলো দোকানে তাজা রাখতে কতটা কেমিক্যাল ছিটায়। সে কথা বাদ দিলেও, শুধু পোকার হাত থেকে বাঁচাতে ফলানোর সময়ে কী পরিমাণ কীটনাশক দেয়! এসব খেলে... উহ্ আমি আর ভাবতে পারছি না।’বাবা ভাতের থালা সরিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন। আমরা যার যার থালার সামনে মূর্তির মতো বসে থাকি। বাবার হয়ত বারবার উঠে ময়লার ঝুড়িতে বাকি খাবারগুলো ফেলে আসতে ইচ্ছে করে না। পদে পদে টের পাই আমাদের ছোটোবেলা থেকে পৃথক সত্তা হিসেবে মানুষ করা হয়নি। বাবার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা বলতে গেলে অভুক্ত থাকি। বিস্কিটে খারাপ জাতের ময়দা, মুড়িতে ভয়ানক মাত্রার ইউরিয়া, চাল আর ডিমেরও নাকি আজকাল নকল বেরিয়েছে... আমাদের আর রাতের খাওয়া হয় না। শুধু সেই রাতে কেন, পরেও আমরা আর কখনো পেট ভরে খেতে পারি না। বাড়িতে যে কয়টা কলা অবশিষ্ট ছিল, বাবা ফেলে দেন। ওগুলো কেমিক্যাল মাখিয়ে পাকানো হয়েছে। দুধ নাকি দুধই নয়, পুরোটাই পানি আর রং। পেটের খিদে চেপে আমরা নিজেদের ঘরে এসে মনমরা হয়ে বসে থাকি।
সকাল সকাল বাবা ঘোষণা করেন, কলেজ-টলেজ যার যা আছে, যাবার দরকার নেই। এদেশে অশিক্ষিত মানুষ যতটা কষ্টে আছে, শিক্ষিতও তাই। শিক্ষা এখন কোনো মর্যাদা নয়। আর শিক্ষিত হয়ে আয়-রোজগার করেইবা কী লাভ, সেই তো চড়া দামে কীটনাশক আর ফরমালিন কিনে খেতে হবে। পড়াশোনা তাই অপ্রয়োজনীয়। তার চেয়ে বড়ো কথা বাইরে বেরোলেই সড়ক দুর্ঘটনা আর ধর্ষণের ভয়। বাবার শেষের কথাটায় আমরা শিউরে উঠি। বাবা বলেন, ‘বাসগুলোর যা অবস্থা, শরীরটা দেখলে মনে হয় হারানোর কিছু নেই; দে ধাক্কা, তবু আগে যাই।’ আমরা মাথা দোলাই। ভাবতে থাকি, সব যাত্রী কি আগেই আসে? পরে আর কেউ আসে না? কেউ অপেক্ষা করে না? বাবা বলে চলেন, ‘বাসের সিঁড়িতেও জায়গা নেই, তবু যাত্রী নেবে, মানুষেরাও উঠবে, প্রতিযোগী বাস হাত-পা ছিঁড়ে নিয়ে গেলেও তাদের দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে।’ আমরা বলি যে আমরা উঠব না, অপেক্ষা করব। বাবা খেঁকিয়ে ওঠেন, ‘অপেক্ষা করবে মানে? রাত হয়ে যাবে না? তারপর কোনো বাস কি মাইক্রোবাস এসে উঠিয়ে নেবে, চলতে চলতে কেউ ধর্ষণ করবে, তারপর খুন... আরে, ওভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই তো ফিরতে চাও, তার চেয়ে বাড়িতে থাকো। বেঁচে থাকো।’
আমরা বাড়িতেই থাকি। বেঁচে থাকা জরুরি। কিন্তু কী খেয়ে বাঁচব? আমাদের বাড়িতে মাটি নেই যে সবজি ফলাব, গরু নেই যে দুইয়ে আনব। আমরা একেকজন ছায়ামূর্তির মতো বসে থাকি। বাড়িতে ছিঁটেফোটা খাবার যা ছিল, খিদের জ্বালায় বাবাকে লুকিয়ে আমরা সেসব সাবাড় করে ফেলি। গোলানো পাউডার দুধ আমাদের শেষ ভরসা হয়ে ওঠে। মাথায় বারকয়েক উঁকি দেয়, দুধেও তো মেলামাইন মেশানো হয়েছিল, খেয়ে অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়েছে। বাবার সামনে আমরা সেই স্মৃতি আওড়াই না, বেমালুম চেপে যাই। তবে ধীরে ধীরে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ি। হাত-পা ছড়িয়ে এখানে-ওখানে বসে থাকি; কথা বলি না, হাসি না, কখনো জন্তুর মতো চার হাত-পায়ে হামাগুড়ি দিই। আমরা পুতুলের মতো আচরণ করি, যার সুতো বাবার হাতে ধরা। আমাদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা আর বোধশক্তিসম্পন্ন মা অনেক আগে থেকে বাবার তাবেদারি করতে করতে আপাদমস্তক বশ্যতা মেনে নিয়েছেন। কেউ আমাদের খুঁজতে আসে নাকি জানি না, আমরা দরজা খুলি না, বাইরের আলো আমাদের ঘরে আর আগের মতো আছড়ে পড়ে না। কখনো জানালার কাছে গেলে বাবার আতঙ্ক হয়, ‘কাউকে ডেকেছ নাকি!’ তারপর অদ্ভুত, ক্রূর হাসি তার ঠোঁটে খেলা করে, ‘ডাকলে ডাকো। কেউ আসবে না। কারো সময় নেই, ইচ্ছেও নেই অন্যকে সাহায্য করার। তবে আমরা মরলে ঠিকই আসবে বাড়িটা দখল করতে।’
দিন যায়। খাবারের অভাবে দুর্বল আর ক্রমাগত মুখ বন্ধ রেখে মনে মনে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। নামমাত্র প্রতিবাদের চেতনা আমাদের নিস্তেজ বুদ্ধিতে সুবিধা করতে পারে না। ডাক্তারের দরকার পড়লে বাবা বলেন, ‘কোনো বিশ্বাস নেই, ওষুধে ভেজাল, প্যারাসিটামলে শিশুর মৃত্যুর কথা মনে নেই? ডাক্তাররাও দুই নম্বর। ভুল চিকিৎসা আছে, কমিশন খেয়ে খারাপ অষুধ লিখে দেয়ার ভয়ও আছে। গিয়ে লাভ নেই।‘ বিরোধী মনোভাবের গলা টিপে, টু-শব্দ না করে আমাদেরকে সেটাই মেনে নিতে হয়। গিয়ে লাভ নেই, তার চেয়ে ঢের ভালো ধীরে ধীরে মরে যাওয়া। এতটা নিরীহ থাকার পরেও একদিন বাবা আমাদের বলেন, ‘আমাকে স্বৈরাচারী মনে হচ্ছে, না? পুলিশের কাছে যাবে? ঘরের চাবি কিন্তু আমার কাছে। আর সেখানে গিয়েও লাভ নেই। বলব, আমার নিজের সন্তান, তাদের ভালোমন্দ আমি ভালো বুঝি। আর পুলিশের কথাই যদি ধরো, টাকা ছাড়া তারা কোনো কাজ করে? উলটো বিপদে ফেলে।’
‘বিপদে কেন, আমরা তো কিছু করিনি, বাবা।’
‘আশ্চর্য, কিছু করতে হবে কেন! হাতে বন্দুক নেই, এরকম মানুষ কি বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় না?’
সামান্য আলোকিত নির্লিপ্ত সকাল-দুপুর-বিকেল পেরিয়ে আমরা প্রতিদিন ঘুরঘুট্টি অন্ধকারের প্রতীক্ষা করি। অন্ধকার জাঁকিয়ে এলে অপেক্ষা শুরু হয় ভোরের আবছা আলোর। আলো-আঁধারের আসা-যাওয়ার হিসাব আমরা আর রাখি না। তবে আমরা নিশ্চিত যে আমাদের চোখের আড়ালে কোথাও দিনমান সূর্য ঝলকায়, রাত রাস্তার বাতি কি অন্তত চাঁদের আলোয় হাসে।
আমাদের মতো একদিন বাবার শরীরের শক্তিও ফুরিয়ে আসে। টেনে টেনে কথা বলেন কিন্তু শাসনের মোহ ছাড়তে পারেন না। নিস্তব্ধ বৈচিত্রহীন দিনগুলোতে বাবা একদিন কিছু আবিষ্কারের মতো বলে ওঠেন যে তিনি তার প্রয়াত মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। প্রায় নিষ্ক্রিয় চিন্তাশক্তির উপরে জোর দিলে শৈশব-কৈশোরে দাদির স্নেহময়তার স্মৃতিতে আমরা আপ্লুত হই। দাদির সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী আমাদের শরীরেও সামান্য নড়াচড়া দেখা যায়। নিস্তরঙ্গ একঘেয়ে জীবনের হতাশায় দাদির সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নতুন সম্ভাবনা বলে মনে হয়। বিছানায় উঠে বসার শক্তি নেই বলে বাবা মেঝের মাঝখানে উবু হয়ে বসেন। দুদিন আগে দুধের প্যাকেট ফুরিয়ে গেছে। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা খালি প্যাকেটের স্তূপ সরিয়ে আমরা বাবার চারপাশে গোল হয়ে বসি। অলৌকিক কিছু চোখের সামনে ঘটতে দেখার উত্তেজনায় আমাদের ক্লান্ত চোখ উত্তেজিত হয়। আমরা বাবার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। ঠোঁট নাড়ানোর ক্ষমতা না থাকলেও তিনি বিড়বিড় করে কাউকে কিছু বলেন, আমাদেরকে নয়, হয়ত দাদিকে, সেটা ভাবতে গিয়ে আমরা আগের চেয়ে বেশি উত্তেজিত বোধ করি। প্রতিবার বাবার কথা শেষ হলে আমরা কান পেতে থাকি দাদির কথা শোনার জন্য। অপেক্ষায় দিনের আলো উবে গিয়ে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার নামে। ঘরের থমকে থাকা বাতাস দাদির কথা আমাদের কানে পৌঁছতে দেয় না। আফসোসে স্তব্ধ হয়ে পড়ি আমরা। তারই মধ্যে বাবার কণ্ঠস্বর হঠাৎ জোরালো হয়, ‘এই বাড়ি তুমি আমাকেই দিয়ে গেছ, তাই না, মা?’ বাবার মুখের ভঙ্গি খেয়াল করতে করতে আমরা একসময় দাদির খিলখিল হাসি শুনতে পাই। অবিকল যেমনটা আমাদের ছোটোবেলায় শোনা। হাসি থামিয়ে দাদি বলেন, ‘আদর করে তোকেই দিয়েছি। আর কাউকে নয়। আগলে রাখবি, সবসময় বাড়িতে থাকবি, যেন কেউ দখল করতে না পারে।’
‘পৃথিবীটা খুব খারাপ হয়ে গেছে, মা। তাই বাঁচানোর জন্য আমি ওদেরকে আটকে রেখেছি,’ মন খারাপ করে বলে নিয়েই বাবা আমাদের দিকে তাকান, শিশুর মতো মুখ করে হাসেন, ‘শুনতে পাচ্ছ, শুনতে পাচ্ছ তোমাদের দাদির গলা?’ আমরা আরো ভালোমতো কান পাতি। দাদির হাসি শুনতে শুনতে আমরা শেষ শক্তিটুকু হারাই, বুকের ভিতরে ধীর গতির হাতুড়ি পড়াটা প্রায় স্থবির হয়ে আসে। ক্ষীণ চেতনার শেষ প্রান্তে পৌঁছে আমরা আবারো দাদির কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, ‘কেউ যখন কাউকে বন্দি করতে চায় তখন এমনটাই বলে, বলে বাঁচানোর জন্য স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, বলে ভালোবাসে বলেই শিকল পরিয়েছে।’