এসো পা বাড়াই (৩২ তম পর্ব)

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:৩০

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

বেশিরভাগ মানুষ আসলে চাই পছন্দনীয় হতে এমনকি আমিও - এবং এটা শুধুমাত্র ভালো লাগে বলেই না। জনপ্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হিসেবেও কাজ করে ব্যক্তিগত আর পেশাগত সাফল্যের ক্ষেত্রে। কারো পরিচিতি বা সমর্থনে কাজ করা বা তাকে উন্নীত করার ইচ্ছা নির্ভর করে সেই মানুষটার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের উপর। আমাদের প্রয়োজন তার (নারীর) কাজ করার সামর্থের উপর বিশ্বাস রাখা এবং এই কাজ করার সময় সবার সাথে মিলেমিশে করা। এজন্যই, স্বভাবজাতভাবেই আমাদের অনেকেই তাদের কর্মক্ষমতাকে দমিয়ে রাখার চাপ অনুভব করে।     

২০১১ সালের অক্টোবরে, ফেসবুকের প্রকৌশলী পরিচালকদের একজন জসেলিন গোল্ডফিন (Jocelyn Goldfein), আমাদের নারী প্রকৌশলীদের নিয়ে একটা সভা ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি সবাইকে উৎসাহিত করেছিলেন, তাদের উৎপাদিত পণ্যে তারা যে অগ্রগতি করেছেন তা সবাইকে জানাতে। সবাই নীরব। কেউ চায়নি তার নিজের শিঙা বাজাতে। কে কথা বলতে চায়, যখন স্ব-প্রচারিত নারীরা অপছন্দনীয়! জসেলিন তার পদ্ধতি বদলে ফেললেন। নারীদেরকে নিজেদের সম্পর্কে বলার পরিবর্তে তিনি একজনকে অন্যজনের গল্প বলতে বলেছিলেন। আলোচনাটি তখন পরোপকারিতার দিকে মোড় নেয়, যা সবাইকে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়।

নিজের সাফল্যের মালিকানা আরও সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি। একজন কর্মচারী ভালো ফলাফলে অবদান রাখছে, কর্মক্ষেত্রে মানুষের এই বিশ্বাস এর উপর পেশাগত অগ্রগতি নির্ভর করে। পুরুষরা বেশ সাবলীলভাবেই নিজের কাজের কৃতিত্ব দাবী করতে পারে যদি না তা অহংকারের দিকে মোড় নেয়। নারীদের জন্য নিজের কাজের কৃতিত্ব নেয়া, সত্যিকারের সামাজিক এবং পেশাগত দাম দিয়ে পেতে হয়। বস্তুত, একজন নারী কোন চাকুরীর সাক্ষাৎকারে যদি, কেন সে যোগ্য তা ব্যাখ্যা করে বা পুরনো সাফল্য উল্লেখ করে তবে তার নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। 

চলার পথে এই দ্বিমুখী বাধার পরীক্ষা যেন যথেষ্ট নয় নারীর জন্য, লিঙ্গের বাঁধাধরা ছকও নারীদের অতিরিক্ত কাজ করার দিকে ধাবিত করতে পারে, কোন অতিরিক্ত পুরস্কার ছাড়াই। যখন একজন পুরুষ তার সহকর্মীকে কোন সাহায্য করে, প্রাপক তার কাছে ঋণী বোধ করেন এবং খুব উঁচু দরের সম্ভাবনা থাকে সেই সুবিধা ফেরত দেয়ার। কিন্তু যখন একজন নারী উপকার করে তখন ঋণগ্রস্ততার অনুভূতি হয় দুর্বল। সে (নারী) পরোপকারী হবেই, ঠিক না? সে (নারী) চায় অন্যদের সাহায্য করতে। অধ্যাপক ফ্লিন (Flynn) এটাকে লিঙ্গ ছাড় (gender discount) সমস্যা বলে অবিহিত করেছেন, এর মানে নারীরা পেশাগত জরিমানা পরিশোধ করছে, তারা পরোপকারী হতে ইচ্ছুক, এই অনুমান করে নেয়ার কারণে। অন্যদিকে যখন একজন পুরুষ তার সহকর্মীকে সাহায্য করে, তাকে বিবেচনা করা হয় প্রয়োগকারী হিসেবে এবং প্রতিদানে আরো অনুকূলভাবে তার কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয় আর বেতন এবং বোনাস বাড়িয়ে পুরস্কৃত করা হয়। আরও হতাশাব্যঞ্জক যা তা হলো, যখন কোন নারী তার সহকর্মীকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকে, প্রায় ক্ষেত্রেই তার মূল্যায়ন হয় অপেক্ষাকৃত কম অনুকূলভাবে এবং কম পুরস্কার দিয়ে। কিন্তু একজন পুরুষ যে সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করে? তাকে কোন মূল্য পরিশোধ করতে হয় না।   

(চলবে...)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত