এসো পা বাড়াই (৩০ তম পর্ব)
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৪৪
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
আমার প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের মাঝের গ্রীষ্মে ডাকে আমি একটি চিঠি পাই, চিঠিটিতে প্রথম বর্ষের সর্বোচ্চ একাডেমিক রেকর্ড করে, হেনরি ফোর্ড স্কলার (Henry Ford Scholar) মনোনীত হওয়ায় আমাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছিল। চেকটা ছিল ৭১৪.২৮ ডলারের, বেজোড় সংখ্যা, যা তাৎক্ষনিক সংকেত দেয় যে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পুরস্কারটি ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষের জন্য যখন আমরা স্কুলে ফেরত এসেছিলাম, ছয় জন পুরুষ সবাইকে জানিয়েছিল যে তারা এই পুরস্কার পেয়েছে। আমি আমার চেককে সাত দিয়ে গুণ করেছিলাম এবং এটা প্রায় একটি পূর্ণ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। রহস্য সমাধান। আমরা সাত জন ঐ পুরস্কার পেয়েছিলাম- ছয় জন পুরুষ এবং আমি।
অন্য ছয় জন বিজয়ীর মত আমি আমার পুরস্কারের তথ্য সর্বসাধারণে জানাইনি। আমি শুধুমাত্র আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু স্টিফেন পল (Stephen Paul)-কে বলেছিলাম এবং জানতাম, সে আমার গোপনীয়তা রক্ষা করবে। বাহ্যিকভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়তো আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে, যেহেতু হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (Harvard Business School) এর ৫০ শতাংশ গ্রেড নির্ভর করে ক্লাসে অংশ গ্রহণের উপর। অধ্যাপক ৯০ মিনিট পড়ায় এবং কোন কিছুই লিখে রাখতে দেয় না, তাই তাদেরকে ক্লাসের আলোচনার স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। যখন একটি ছাত্র অন্যকে নির্দেশ করে মন্তব্য করে - “যদি টম এর বক্তব্যের উপর আমি আমার ভিত্তি গড়তে পারি …” - সেটা অধ্যাপককে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো এবং কে তা করেছে তা মনে করতে সাহায্য করে। একেবারে বাস্তব জীবনের মত, পারদর্শিতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে, লোকজনের একজনের প্রতি আর একজনের প্রতিক্রিয়ার উপর।
অন্য ছয় জন ফোর্ড স্কলার খুব তাড়াতাড়ি সর্বাধিক উদ্ধৃত বক্তায় পরিণত হল, যেহেতু তাদের একাডেমিক অবস্থান তাদেরকে তাৎক্ষণিক বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছিল। এছাড়াও তারা অগ্রিম কাজের প্রস্তাব পেয়েছিল সম্মানজনক চাকুরীদাতাদের কাছ থেকে, এমনকি যখন অফিসিয়াল নিয়োগের সময় শুরুই হয়নি। একদিন ক্লাসে মর্যাদাপূর্ণ ছয় জনের একজন বক্তব্য রেখেছিল যা আমার কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান ছিল যে, আলোচনার বিষয়টি সে পড়েওনি। প্রত্যেকে তার স্তাবকতায় মেতে উঠেছিল। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, আমি কি বড় ভুল করেছি, আমি যে সাত নাম্বার জন তা লোকজনকে না বলে। চমৎকার হতো, বিজন্যাস স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষ ভেসে পার হয়ে যেতাম, এমনকি বিষয়বস্তু না পড়েই।
কিন্তু আমি আসলে কখনোই প্রকাশ্যে যাওয়াটা বিবেচনায় আনি নাই। আমি প্রবৃত্তিগতভাবেই জানতাম যে আমার একাডেমিক পারদর্শিতা সবাইকে জানানো একটা খারাপ ভাবনা হবে। অনেক বছর পর, যখন আমি হাইডি/হাওয়ার্ড এর কেস স্টাডি জেনেছিলাম, আমি কারণটা বুঝতে পেরেছিলাম। ক্লাশের শীর্ষে অবস্থানের কারণে আমার পুরুষ সহপাঠীদের জীবন হয়ত সহজ হতে পারে, কিন্তু আমার জীবন হয়ত আরো কঠিন হতো।
(চলবে...)