ঝিনাইদহে খালে ৪৩ নারীর মাছ চাষ
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ০৩:৩৯
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল। এ খালে বছরে পানি থাকে ৬মাস। গ্রামটি দিয়ে অতিক্রম করার সময় চোখে পড়বে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। গ্রামের ৪৩ জন নারী মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গ্রামের ৪৩ নারী নিজেরাই লেগে পড়েছেন মাছ চাষে। স্বপ্ন দেখেন তারা নিজেরা মাছ চাষ করে খাবেন এবং অতিরিক্ত মাছ বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করবেন। গত ৪ বছর ধরে শিরিষকাঠ খালে এভাবে মাছ চাষ করছেন তারা। নিজেরাই মাছের খাবার দেওয়া, দেখাশোনা এমনকি মাছ ধরার কাজটিও নিজেরাই করেন। ইতিমধ্যে তাদের গড়ে তোলা দোয়েল ও কোয়েল সমবায় সমিতিতে মাছ বিক্রির কয়েক লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শিরিষকাঠ খাল। মল্লিকপুর, কামালহাট, দৌলতপুর, বলরামপুর, মহেশ্বরচাদা, হরিগোবিন্দপুর গ্রামের মাঝখানের বিস্তর মাঠ ও টায়াখালী বিলের সঙ্গে রয়েছে খালের সংযোগ। আর বলাকান্দর গ্রামের মধ্যে দিয়ে যে অংশ গিয়েছে তার নাম শিরিষকাঠ খাল।
আরও জানা যায়, বলাকান্দর গ্রামের ২টি নারী সমিতি আছে। একটির নাম দোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি অপরটি কোয়েল মহিলা সমবায় সমিতি। দুটি সমিতির প্রায় ৪৩জন সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি সপ্তাহে চাঁদা জমা দিয়ে থাকেন। তারা একদিন উদ্যোগ নেন কিভাবে শিরিষকাঠ খালে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। উভয় সমিতির সদস্যরা একদিন মিটিংয়ে বসেন। তার পর কোন পুরুষের সহযোগিতা ছাড়াই তারা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালের দুপাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন।
এরপর তারা প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কিছু মাছের পোনা ছাড়েন পরীক্ষামূলকভাবে। সেটা ২০১৩ সালের কথা। সেবার তারা যে টাকার মাছ ছেড়েছিলেন তার চেয়ে প্রায় ৩ গুন টাকার মাছ আহরণ করেন। এরপর তারা আর থেমে থাকেননি। প্রতিবছর গ্রামের ঐ খালে তারা রুই, কাতল, সিলভারকার্প, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ শুরু করেন। ২০১৫ সালে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন তারা। এবার ২০১৬ সালেও তারা লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।
দোয়েল মহিলা সমিতির সভানেত্রী হাজেরা খাতুন জানান, তারা প্রায় ৪ বছর ধরে এই খালে মাছ চাষ করছেন। তিনি জানান, প্রথমে একটি সমস্যা হচ্ছিল মেয়েরা খালে নেমে মাছ চাষ করবে? পরে যখন সকল সদস্যই চাষকৃত মাছ হাতে পেলো এবং বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় হলো তখন থেকে উদ্যম আরো বেড়ে গেছে।
কোয়েল মহিলা সমিতির সভানেত্রী আজিজা বেগম জানান, গ্রামের মধ্যে প্রবাহিত পরিত্যক্ত খালকে তারা পরিস্কার করে মাছ চাষ করছেন। আর যারা মাছ চাষ করছেন তারা সকলেই নারী। বাড়ির অন্য কাজ শেষ করে এই খালে মাছের পেছনে তারা সময় দিচ্ছেন।
তিনি জানান, শিরিষকাঠ খালে বছরে ৬ মাস পানি থাকে। যদি সরকার এটিকে খনন করে সংস্কার করে ১২ মাস পানি থাকার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে তারা এখানে ১২ মাস মাছ চাষ করতে পারতো।
কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দ: শরিফা আক্তার জানান, তিনি নিজে ঐ গ্রামে মাঝে মাঝে যান এবং খালে যে সব নারীরা মাছ চাষ করেন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এবার মৎস অধিদপ্তরের সহযোগিতায় শিরিষকাঠ খালে বেশ কিছু মাছের পোনা দেওয়া হয়। যার মালিক পরবর্তীতে দুটি সমিতির মহিলা সদস্যরাই পান। মাছ আহরনের দিন তিনি তাদের সাথেই ছিলেন।