মাদাম তুসো
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৫০
মাদাম তুসো আর তাঁর মোমের জাদুঘরের নাম শুনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তাঁর পুরো নাম আনা মারিয়া গ্রোশোল্জ এবং মোমের ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে পরিচিত। বিয়ের পর তাঁর নতুন নাম হয় ‘মাদাম তুসো’।
মাদাম তুসো জাদুঘরটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত।এ ছাড়া এর অনেকগুলো শাখা রয়েছে। এর মধ্যে আমস্টারডাম, ব্যাংকক, হংকং (ভিক্টোরিয়া পীক), লাস ভেগাস, সাংহাই, বার্লিন, ওয়াশিংটন ডি.সি, নিউ ইয়র্ক সিটি এবং হলিউড অন্যতম। মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ মাদাম তুসো জাদুঘরের বর্তমান স্বত্ত্বাধিকারী।
মাদাম তুসো ঘুমন্ত অবস্থায় ১৮৫০ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডনে মারা যান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মাদাম মারি তুসোর স্মারক চিহ্ন হিসেবে সেন্ট ম্যারি রোমান ক্যাথোলিক চার্চ, ক্যাডোগান স্ট্রিট, লন্ডনের প্রধান অংশের দক্ষিণ দিকে সংরক্ষিত আছে।
তিনি ১৭৬১ সালের ১ ডিসেম্বর ফ্রান্সের স্ট্রবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। এর ২ মাস পর বাবা জোসেফ গ্রোশোল্জ এক যুদ্ধে মারা যান। এরপর মা এ্যানি-ম্যারি ওয়াল্দারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের বার্নে চলে যান তুসো। সেখানে তার মা ডা. ফিলিপ কার্টিসের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন। কার্টিস ছিলেন মোমের ভাস্কর্যে সিদ্ধহস্ত। এগুলো মূলত শব ব্যবচ্ছেদ বিদ্যায় ব্যবহার করতেন। তুসো তাকে চাচা হিসেবে সম্বোধন করতেন।
মোমের প্রদর্শনীর জন্য ১৭৬৫ সালে কার্টিস প্যারিসে চলে যান। সেখানে তিনি ফ্রান্সের সম্রাট পঞ্চদশ লুইয়ের শেষ উপ-পত্নী মাদাম দু ব্যারির মোমের ভাস্কর্য তৈরি করেন। এ ভাস্কর্যটিই প্রাচীনতম ভাস্কর্য হিসেবে এখনো মাদাম তুসোর জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। ১৭৬৭ সালে তুসো ও তার মা সেখানে কার্টিসের সঙ্গে যোগ দেন। ১৭৭০ সালে কার্টিসের প্রথম প্রদর্শনী দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়। ১৭৮২ সালে তিনি দ্বিতীয় প্রদর্শনী করেন।
তুসোকে মোম দিয়ে ভাস্কর্য শিল্পকলায় পারদর্শী করে তোলেন কার্টিস। তুসোও মেধা ও প্রতিভার সংমিশ্রণে ভাস্কর্য তৈরিতে মনোনিবেশ ঘটান। ১৭৭৮ সালে প্রথম মোমের প্রতিকৃতি হিসেবে দার্শনিক জাঁ জাক রুশোর ভাস্কর্য তৈরি করেন।
পরের দশকের শেষ দিকে তুসো প্যারিসে সংগঠিত ফরাসি বিপ্লবের সাথে যুক্ত হন। সেখানে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ও রোবসপিয়ের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার দেখা হয়। ওই সময় তুসো সন্ত্রাসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য গিলোটিনও প্রস্তুত করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পান। তুসো পরবর্তীতে গিলোটিনে নির্মমভাবে নিহতদের মুখোশ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ছিল ষোড়শ লুইস, ম্যারি এন্টোনিটে, জিন-পল মারাত ও রোবসপিয়ের মুখোশ। এ মুখোশগুলো বিপ্লবকালীন সময়ে প্যারিসের রাস্তায় পতাকা ও শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হতো।
১৭৯৪ সালে ডা. কার্টিস মৃত্যুর আগে তার যাবতীয় মোমের মূর্তি তুসোকে দান করেন। ওই মূর্তিগুলো নিয়ে পরবর্তী ৩৩ বছর ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী করেন। ১৮০২ সালে মূর্তি শিল্পের অগ্রদূত পল ফিলিডোরের আমন্ত্রণে লন্ডনে যান। সেখানে লিশিয়াম থিয়েটারে প্রদর্শনী করেন। তুসোর প্রদর্শনীর টাকার অর্ধেক ফিলিডোর নিয়ে যান। এ দিকে নেপোলিয়নের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। চরম আর্থিক সঙ্কটগ্রস্ত তুসো আর ফ্রান্সে ফিরে যেতে পারেননি। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে মোমের সংগ্রহশালা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন।
১৮৩১ সাল থেকে মাদাম তুসো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লন্ডনের বেকার স্ট্রিটে বসবাস করেন। ১৮৩৫ সালে বেকার স্ট্রিটে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন, যা ‘মাদাম তুসো জাদুঘর’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। জাদুঘরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘ভৌতিক কক্ষ’। এতে ফরাসি বিপ্লবে নিহত ব্যক্তিসহ খুনী ও ঘাতকদের মূর্তি রয়েছে। ১৮৩৮ সালে তিনি আত্মজীবনী লিখেন। ১৮৪২ সালে তৈরি করেন নিজের মোমের ভাস্কর্য, যা জাদুঘরের সামনে রক্ষিত আছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া