মহানায়িকার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৩
২০১৪ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। যেতে যেতে চলচ্চিত্রের অনন্য অধ্যায়ে তাঁর পদচিহ্ন রেখে গেছেন। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার। কিন্তু প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। তবে পরের বছরেই মুক্তি পায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। এই ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে শুরু হয় উত্তম-সুচিত্রা জুটির পথচলা। এরপর এই জুটি হয়ে ওঠে ইতিহাস।
প্রয়াণ দিনে মহানায়িকাকে দেশ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে।
পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্ত কলকাতা গিয়ে সুচিত্রা সেন হয়ে উঠেছিলেন। আর চলচ্চিত্র অভিনয়ে তিনি ২৫ বছর সময় কাটিয়েছেন। নায়িকা থেকে হয়ে উঠেছেন মহানায়িকা। এরপর কোটি বাঙালির হৃদয়ে ঝড় তুলে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পর্দার অন্তরালে।
১৯৩১ সালে বাংলাদেশের পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে করুনাময় দাশগুপ্ত আর ইন্দিরা দাশগুপ্তের ঘরে জন্মেছিলেন রমা। পাঁচ সন্তানের মধ্যে রমা ছিলেন তৃতীয়। তার শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে পাবনাতেই। পড়াশোনা করেছেন পাবনার মহাখালী পাঠশালা ও পাবনা গার্লস স্কুলে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় আরও অনেক হিন্দু পরিবারের মতো রমার পরিবারও পাড়ি জমায় কলকাতায়।
একই বছরে কলকাতায় থিতু হওয়া ঢাকার আরেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রমার। নামের শেষে স্বামীর উপাধি যোগ করে তিনি হয়ে যান রমা সেন। দিবানাথের মামা বিমল রায় ছিলেন তখনকার খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। ভাগ্নেবধূ রমাকে তিনিই নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রের পর্দায়। শ্বশুরের আগ্রহ আর স্বামীর উৎসাহে রূপালী জগতে নাম লেখানো রমা হয়ে যান সুচিত্রা সেন। এর পর ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে।
সাড়ে চুয়াত্তর চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে উত্তম-সুচিত্রা জুটির পথচলা শুরু হয়। এরপর একে একে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বাইরে ব্যক্তি জীবনেও তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এরপর ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার তার প্রযোজিত 'হারানো সুর' ছবিতে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব দিলে সুচিত্রা বলেছিলেন, 'তোমার জন্য সব ছবির ডেট বাতিল করব।’
২৫ বছর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর মহানায়িকা রহস্যজনকভাবে প্রায় ৩৫ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ২০১৪ সাল, প্রায় তিনটি যুগ ঠিক কোন অভিমানে তিনি অন্তরালে জীবনযাপন করেছেন? এই কাহিনী আজও রহস্য সৃষ্টি করে আছে সুচিত্রা ভক্তদের মধ্যে। অন্তরাল ভেঙে প্রথমে তিনি বাইরে আসেন মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর। মাঝরাত পর্যন্ত বসেছিলেন তাঁর লাশের পাশে। সুচিত্রা শেষ জনসমক্ষে আসেন ১৯৮৯ সালে, তার গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর। ২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি।
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সুচিত্রা সেন। প্রথম অভিনীত ছবিটি পরে আর মুক্তি পায়নি। ১৯৫৫ সালে বিমল রায়ের পরিচালনায় হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবিতে দীলিপ কুমারের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান সুচিত্রা। ‘পার্বতী’ চরিত্রে তার অভিনয়ে বিমোহিত হয় দর্শক। এ ছবি তাঁকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার। এরপর একে একে অভিনয় করেন শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দীপ জ্বেলে যাই, সবার উপরে, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তর মতো দর্শকপ্রিয় সব ছবিতে।
তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পান ১৯৭২ সালে; ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ অর্জন করেন। দুই যুগের অভিনয় জীবনে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে ৬০টির বেশী ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা। সবশেষ ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা। এর পর ৩৫ বছর অন্তরালে থাকার পর ২০১৪ সালে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।