প্রথাবিরোধী নিভৃতচারী কবি এমিলি ডিকেনসন
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৫২
নিভৃতচারী আর নির্জনতার কবি হিসেবে সর্বকালের সাহিত্য ইতিহাসে অন্যতম স্থান দখল করে আছেন এমিলি ডিকেনসন। প্রথাবিরুদ্ধ এবং লৌকিকতাবর্জিত এ কবি বিংশ শতাব্দীতে কবিতার জগতে এনেছেন এক নতুন ধারা। প্রচারবিমুখ এ কবির কাব্যপ্রতিভা বিশ্ব দরবারে পরিচিত লাভ করে তাঁর মৃত্যুর পর।
ম্যাসাচুসেটস শহরের নিকটবর্তী আমহার্স্ট শহরে ১৮৩০ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আমেরিকার মৌলিক কবি হিসেবে পরিচিত এমিলি ডিকেনসন। মেধাবী এবং মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত এমিলি আমহার্স্ট একাডেমিতে পড়াশুনা শুরু করলেও তা বেশিদূর এগোতে পারেনি।
আমহার্স্ট কলেজে থাকাকালে এমিলি ইংরেজি এবং ধ্রুপদী সাহিত্য, লাতিন, উদ্ভিদবিদ্যা ও ইতিহাসের ক্লাস করতেন। মাউন্ট হলিওক ফিমেল সেমিনারিতেও একবছর ছিলেন তিনি। সেখানে ধর্মজ্ঞান তাঁর জীবনে অন্য মাত্রা আনে। ১৮৪৮ সালে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। যদিও তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোন সংশয় ছিল না, তবুও এমিলি ছিলেন প্রতিবেশিদের কাছে এক রহস্যময়ী নারী।
অন্তর্মুখী স্বভাবের এই নির্জনতাপ্রিয় মানুষটি লেখালেখি শুরু করেন কিশোর বয়স থেকেই। বেশিরভাগ কবিতার বিষয়বস্তু ছিল মৃত্যু আর অমরত্ব। লেখালেখির ব্যাপারে যারা যারা ছোট এমিলিকে আগ্রহীকে করে তোলেন তাদের মধ্যে আমহার্স্ট একাডেমির প্রিন্সিপাল লিওনার্ড হামফেরি অন্যতম। এছাড়া পারিবারিক বন্ধু বেনজামিন ফ্রাংকলিন নিউটন এর অবদান উল্লেখযোগ্য। তবে এমিলির সাথে সবচেয়ে বেশি সখ্য ছিল তাঁর ভাবী সুসান গিলবার্টের সাথে। কবি এমিলি সুসানকে প্রায় ৩০০ এর মত চিঠি লিখেছেন বলা জানা যায়।
ছোট ছোট শব্দ আর বাক্য ব্যবহার করে তার কবিতা লেখার শৈলী তখনকার সময়ের জন্য অনেকটাই অপ্রচলিত।তাই প্রায় ১৮০০ এর মত কবিতা লিখলেও এমিলির জীবদ্দশায় মূলত ডজনখানেক কবিতা প্রকাশিত হয়। বেশিরভাগই প্রকাশকদের ইচ্ছে অনুযায়ী ছাপানোর পূর্বে পরিমার্জন করা হয়। যার ফলে নষ্ট হয়ে যায় এ কবির অনেক মৌলিক লেখা।
সহজ সরল এবং নির্জন জীবনযাপন করতেন কবি এমিলি। কম সময়ে লিখেছেন অনেক বেশি সংখ্যক কবিতা যা বেশিরভাগই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। এমনকি তাঁর পরিবারের কেউও তাঁর এই কাব্যপ্রতিভার কথা তেমন জানতেন না।
তাই তো তাঁর মৃত্যুর পর ১৮৯০ সালে প্রথম এমিলির ছোট বোন লাভিনিয়া, তার কাব্যগ্রন্থের বিশাল বান্ডিল আবিস্কার করেন এবং তা ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। যদিও প্রথম বইটিতে অনেক পরিমার্জন করা হয়। কোন ধরনের পরিমার্জন ছাড়া এমিলি ডিকেনসন এর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। বইয়ের নাম " দ্য পয়েমস অব এমিলি ডিকেনসন"।
১৭ বছর বয়স থেকেই কবি এমিলি নিজেকে গুটিয়ে নেন। খুব কম বয়সে কাছের বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু তাঁর মনে এনে দিয়েছিল নির্জনতাপ্রীতি, যা পরবর্তীতে রুপান্তরিত হয় অসুস্থতায়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই মহান কবি লেখালেখি করে গেছেন। তিনি চিরকুমারী ছিলেন। ১৮৮৬ সালের ১৫ মে মৃত্যুবরণ করেন এই বিখ্যাত কবি।