আয়োজন করে এমপি কন্যার বাল্যবিয়ে!
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৩
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের এমপি সালাহউদ্দিন আহম্মেদ মুক্তি মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নিজ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাজকীয় এ বিয়ে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ মাঠে ঢাকঢোল পিটিয়ে এমপি নিজেই তার উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করেন। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় শুক্রবার একই স্থানে নিজের মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিলেন সেই এমপি। শুধু তাই নয়, এমপি কন্যার বাল্যবিয়ের পাত্র ওবায়দুর রহমান কায়সার পুলিশের এসআই পদে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় কর্মরত। বড় মেয়ে পায়েলের স্বামী দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তার নাম সাইদুজ্জামান নন্দন।
উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করে নিজের মেয়ের বাল্যবিয়ের আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, গত ৩১ জানুয়ারি মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তগাছা) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। সেই মাঠেই তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট মেয়ের বাল্যবিয়ে দিলেন কীভাবে?
স্থানীয়রা জানান, এমপির বড় মেয়ে মাসকুরা মীম পায়েল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করলেও ছোট মেয়ে আফসানা মীম প্রিয়ন্তী ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ শহরের একটি প্রাইভেট মাদরাসা থেকে সপ্তম শ্রেণী পাস করেছে।
ময়মনসিংহ সদরের গলগণ্ডা এলাকার মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসার মুতামিম মো.জামাল উদ্দিন জানান, এমপি সালাহউদ্দিন আহম্মেদ মুক্তির মেয়ে প্রিয়ন্তী তার মাদরাসা থেকে গত বছর সপ্তম শ্রেণি পাস করেছে।
এমপি সালাহউদ্দিন আহম্মেদ মুক্তির মেয়ের বাল্যবিয়ের রাজকীয় এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভাগ ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার মেহমান এ বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় পার্টির এই এমপির এক সঙ্গে দুই মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানের খরচ প্রায় ৪ কোটি টাকা। জবাই করা হয় ৫০০ খাসি। খাদ্য মেনুতে ছিল বাসমতি চালের পোলাওসহ মুখরোচক নানা খাদ্য। স্থানীয় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠসহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট সদস্যরা ছিলেন শৃঙ্খলার দায়িত্বে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, আইন প্রণেতা নিজে আইন না মানলে সাধারণ নাগরিকরা কি করবেন। এ ঘটনা জাতির জন্য লজ্জার।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এমপি সালাহউদ্দিন আহম্মেদ মুক্তি জানান, স্থানীয় পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন না নিলেও তার ছোট মেয়ে আফসানা মীমের বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে। তবে বড় মেয়ের চেয়ে ছোট মেয়ে দুই বছরের ছোট বলেও স্বীকার করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় মেয়ে মাসকুরা মীম পায়েলের স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী বর্তমান বয়স ১৮ বছর ৫ মাস। মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র মো.শহীদুল হক জানান, আফসানা মীম প্রিয়ন্তীর নামে জন্মনিবন্ধন নেয়া হয়নি।