কল্পনা চাকমার জন্য প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক
প্রকাশ : ১০ জুন ২০১৬, ০০:৫১
কল্পনা চাকমা অপহরণের ২০ বছর পরেও এই ঘটনার কোন সুরাহা না হওয়ায় বিচার দাবিতে নীরব প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম লেখক ও কর্মী ফোরাম (CHT Writers & Activists Forum)।
প্রথমে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে নীরব প্রতিবাদ এর কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে ‘বৃহৎ পরিসর ও সকলের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে’ শুক্রবার শাহবাগে বিকাল ৪টায় প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “সারা দেশে আজ বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তীব্রভাবে। বিনা বিচারে হত্যা, পাহাড় ও সমতলে নারীর উপর আগ্রাসন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে”।
“পাহাড়ের অবিসংবাদিত নেত্রী কল্পনা চাকমা আজ থেকে ২০ বছর আগে অপহৃত হয়েছেন সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের হাতে। এখনো তার বিচার করা হয়নি বরং প্রতি ক্ষেত্রে বিচারকে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের প্রাণের দাবিকে এভাবে বারবার পদদলিত করে দিয়ে সেখানে এখনো সেনাশাসন অব্যাহত রেখেছে রাষ্ট্র। সমতলের প্রতিটি নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেও বিচারকে প্রলম্বিত করা হয়েছে। তাই আজ কল্পনা শুধুমাত্র পাহাড়ের নন, বরং সারা বাংলাদেশের নারীর প্রতীকে পরিণত হয়েছেন”।
আয়োজকদের পক্ষে অজল দেওয়ান বলেন, “এর মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, কল্পনাকে আমরা এখনো ভুলে যাই নি। বরং নিপীড়নের বিরুদ্ধে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে, হত্যা-অপহরণের বিরুদ্ধে কল্পনা চাকমা বারবার ফিরে এসেছেন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। পাহাড়ের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে, শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কল্পনার আদর্শ আমাদের সামনে আজ এগিয়ে যাওয়ার এক পাথেয়”।
এদিকে কল্পনা চাকমার অপহরণের ২০ বছর পূর্তিতে তাকে ঘিরে একটি ক্যাম্পেইন প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই ক্যাম্পেইনে কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদে where is Kalpana? #myunseensister (কল্পনা কোথায়? আমার অদেখা বোন) লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ছবি জমা দিতে বলা হয়েছে সবাইকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন কল্পনা চাকমা। তিনি ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাইল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন। এই ঘটনাটি বাংলাদেশ এবং বহি:বিশ্বে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে ও মানবাধিকার এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এমনকি তখন এ ঘটনা প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ও সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
এই অপহরণের জন্য অপহৃতার পরিবার থেকে বরাবরই অপহরণকারী হিসেবে তৎকালীন সময় রাঙামাটিতে কর্তব্যরত সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
কল্পনা চাকমা অপহৃৎ হওয়ার পর দেশ ও বিদেশে সংগঠিত বিভিন্ন জনমত ও আন্দোলনের চাপে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। একই সাথে সরকার পুলিশ বিভাগের মাধ্যমেও তদন্ত পরিচালানা করে।
কিন্তু অপহৃৎ হওয়ার দীর্ঘ ২০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার। আবার এখনও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি, তাই 'কল্পনা চাকমা অপহরণ'-এর বিচারের কাজও থেমে রয়েছে।