চট্টগ্রাম বিপ্লবের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিপ্লবী কল্পনা দত্ত

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৬, ১৭:০৫

জাগরণীয়া ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিপ্লবের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিপ্লবী কল্পনা দত্ত

বিপ্লবী কল্পনা দত্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিপ্লবের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামের শ্রীপুর-এ এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। ১৯২৯ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর কলকাতায় এসে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। যোগদান করেন কলকাতার বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ। পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন।

১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীন বন্দী। সেই সময় নারীদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্ত নিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তাঁর দলে গ্রহন করেন।
কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরি করেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দিয়ে বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।কিন্তু তার পরিকল্পনা্টি শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব হয় না।ফলে তার বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে।

১৯৩১ সালে মাস্টার দা, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমনের দায়িত্ব দেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ও গ্রেফ্তার হন। অপারেশনে প্রীতিলতা ধরা পড়লে তিনি আত্মহত্যা করেন। জেলে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং প্রীতির আত্মহত্যার খবর শোনেন।

জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ঠিকানায় আক্রমন চালায়। কল্পনা দত্ত এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দা বন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তাঁর কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন।

১৯৪৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে সিপিআই নেতা পি.সি.যোশীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে চাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে সিপিআই প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে বসবাস শুরু করেন।

বিপ্লবী কল্পনা দত্ত ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লীতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত