বিপদ টের পেয়েছিলেন মিতু

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০১৬, ১৮:৫৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে হুমকি আসায় পরিবার নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন জঙ্গি দমন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। মিতু চট্টগ্রামের বাসা বদল করার কথাও ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছেন মিতুর প্রতিবেশী।

ও আর নিজাম রোডে ১৫ তলা একটি ভবনের অষ্টম তলায় বাবুল আক্তারের বাসা। ছয় বছরের ছেলে আর চার বছরের মেয়ে ছাড়াও কিশোরী এক গৃহকর্মীকে নিয়ে ওই বাসায় থাকছিলেন মিতু। 

রবিবার ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে জিইসি মোড়ের কাছে খুন হন মিতু। ছয় বছর বয়সী ছেলের বিবরণ অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে করে আসা তিনজন তার মাকে প্রথমে ছুরি মারে, তারপর গুলি করে চলে যায়।

হত্যাকান্ডের পর শারমিন আক্তার নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “গত কিছু দিনে বেশ কয়েকবার নানাভাবে হুমকি পাওয়ার কথা বলেছিলেন মিতু। স্বামী ঢাকায় থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে উদ্বেগে ভুগছিলেন। উনি বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন। কয়েকদিন আগে একবার বলেছিলেন, ‘এই বাসা সবাই চিনে গেছে, বাসা বদলে ফেলতে হবে’।”

সাদ্দাম হোসেন নামের এক কনস্টেবল জানান, সাধারণত সকালে একজন কনস্টেবল এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পরে মিতু তার ছোট মেয়েকে নিয়ে যেতেন কাছের এক স্কুলে। সেখানে প্লে গ্রুপে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েটিকে। 

রবিবার সকালে কনস্টেবলদের কেউ না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে খুন হন। তার ছোট মেয়ে তখন বাসায় ছিল গৃহকর্মীর কাছে। 

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মিতুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার সঙ্গে গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার মিল পাওয়া যায়, যেগুলোতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্তকারীরা।    

চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, এবং গতবছর আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, দিনাজপুরে ইতালীয় এক পাদ্রীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাতেও হামলাকারী ছিল তিনজন। মোটর সাইকেলে আসে, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছুরি, চাপাতি, পিস্তল।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ও র্যা ব। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।   

গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার আহমেদ বলেন, “যেহেতু বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে অনেক কাজ করেছেন, তারাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। তবে সব সম্ভাবনাই আমরা খতিয়ে দেখব।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, জঙ্গিরাই বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন।

জঙ্গি দমনে দায়িত্বরত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে স্ত্রী খুন হওয়ার খবর পেয়ে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে পৌঁছান পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। দামপাড়া পুলিশ লাইন থেকে তিনি সরাসরি যান চট্টগ্রাম মেডিকেলে, যেখানে রাখা হয়েছে মিতুর লাশ।

এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীরা ছুটে যান ও আর নিজাম রোডে বাবুল আক্তারের বাসায়। মা হারা দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত