সংসদে উঠছে সমালোচিত ‘বাল্যবিবাহ বিল’
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:০৬
বৃহস্পতিবারের সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল’।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের কর্মসূচিতে প্রস্তাবিত আইনটি উত্থাপনের কথা রয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বিলটি সংসদে উত্থাপন করবেন। এরপর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে।
ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়া আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে’ মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এবং বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়।
এতে বলা হয়,
“এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
এতে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে উৎসাহিত হবে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
তবে খসড়া আইনটির বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বুধবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, তারা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই খসড়াটি করা হয়েছে।
২৪ নভেম্বর খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯২৯ সালের চাইল্ড মেরিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টকে পুনর্বিন্যাস্ত করে আইনটিকে বাংলায় করা হয়েছে। এখানে (নারীদের) বিয়ের বয়স ১৮-ই আছে। তবে একটা বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।”
‘বিশেষ কেইসের’ জন্য এই বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হলে তা অপরাধ; তবে ‘বিশেষ কেইসের’ ক্ষেত্রে তা হবে না।
এই বিধান যুক্ত করার যুক্তিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সেদিন বলেন, “আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। এ সমস্যাগুলো আছে তো, এটার জন্য একটা ব্যবস্থা।”
সরকারের ওই যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউ বলেছে, এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে।
খসড়া আইনে বাল্যবিবাহে বন্ধে ‘কঠোর’ শাস্তির কথা বলা হলেও অপ্রাপ্তবয়স্করা বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধানকে যথেষ্ট বলে মনে করছে না এইচআরডব্লিউ।
সংগঠনটি বলছে, এই আইন পাস হলে ওই ১৫ দিনের আটকাদেশের মধ্য দিয়েই কিছু বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে, যা বর্তমান আইনের চেয়েও বড় দুর্বলতা তৈরি করবে।