প্রসঙ্গ: ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ’ আইন

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:১৮

১৯২৯ সালে ''বাল্য বিয়ে আইন'' নামে একটা আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই আইন অনুযায়ী, 

কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে বাল্যবিবাহ করতে বা করাতে বাধ্য করতে পারবে না। এখানে শিশু বলতে ওই ব্যক্তিকে বোঝাবে, যার বয়স পুরুষ হলে ২১ বছরের নিচে এবং নারী হলে ১৮ বছরের নিচে।

এরপর ২০১৩ সালে বাল্য ‘বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৩’ নামে নামে একটা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। সে আইন অনুযায়ী, একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্ক নারী কোন শিশু বা নাবালকের সহিত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করিলে, তাহাকে বাল্যবিবাহ  বলিয়া গণ্য করা হইবে।
 
এখানে শিশু ও নাবালক এবং বাল্যবিবাহ ও শিশু বিবাহের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 

“শিশু” (Child) অর্থ অনূর্ধ্ব আঠার বৎসরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি।
“নাবালক” (Minor) অর্থ পুরুষ হইলে একুশ বৎসরের কম এবং নারী হইলে আঠার বৎসরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি। 
“বাল্যবিবাহ” অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষদ্বয়ের যে কোন একজন নাবালক। 
“শিশু বিবাহ” (Child marriage) অর্থ সেই বিবাহ যাহাতে সম্পর্ক স্থাপনকারী পক্ষদ্বয়ের যে কোন একজন শিশু। 

২০১৫ সালে সরকার ১৯২৯ সালের নীতিমালা সংশোধন করে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখলেও ইচ্ছা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে ১৬-তে বিয়ে দিতে পারবে বলে নির্ধারণ করা হয়। এই সংশোধনের বিপক্ষে নারীবাদী এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ব্যক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ জানায়। ২০১৬ সালে এসে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন- ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।  

যেখানে বলা হয়েছে,  

“এখানে (নারীদের) বিয়ের বয়স ১৮-ই আছে। তবে একটা বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।”   

বিশেষ বিধান “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
 
বিশেষ বিধানের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে,  

১) অবিবাহিত মা, যার বাচ্চা আছে; এরকম মাকে প্রোটেকশন দেওয়া এবং বিয়ের মাধ্যমে লিগ্যালাইজড করার জন্য। 
২) আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রেগন‌্যান্ট হয়ে যায়। এ সমস্যাগুলোর একটা ব্যবস্থা করার জন্য। 
৩) মেয়ে ছেলের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানালে  
৪) বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে।   

উপরোল্লিখিত চারটি কারণ বিশেষ বিবেচনায় রেখে মেয়েদের বিয়ের বয়স শিথিল করে ১৮ থেকে ১৬ করা হয়েছে। প্রথমতঃ একটা কথা বলে নেই, ১৮ বছরের কম বলে তাকে আমরা উপরের সংজ্ঞানুযায়ী শিশু বা নাবালিকা বলি। এই বিশেষ ক্ষেত্রে বিয়েটা হবে একজন শিশুর সাথে বিয়ে। এই বিয়েটাও হিসেব অনুযায়ী বাল্য বা শিশুর বিয়ের আওতায় পরে যাচ্ছে। ১০-১২ বছরে কোন মেয়ে শিশু যদি প্র্যাগনেন্ট হয়ে যায়, তবে কি তার বিয়ের জন্য ১৬ হওয়া অব্ধি অপেক্ষা করা হবে? মনে হয় না। কারণ এই অবিবাহিত সন্তানের পিতা নির্ধারণের আবশ্যকতার দরুণই হোক বা অনাগত সন্তানটি যাতে জারজ হিসেবে সমাজে পরিচিত না হয়, সেজন্য তাকে ওই বয়সেই বিয়ে দিতে বাধ্য করা হবে। আর যদি ১০-১২ বছরের মাকে ১৬ পর্যন্ত অপেক্ষা করানো যায়, তবে ১৬ বছরের মাকে ১৮ পর্যন্ত অপেক্ষা করানো যাবে না কেন? যদি আমাদের সমাজব্যবস্থা নারীবান্ধব হতো তবে, অপেক্ষা করানো যেতো। যদি সন্তানের প্রধান পরিচয় মা হতো তবে সম্ভব হতো। যদি আমাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক না হতো তবুও অপেক্ষা করা যেতো। যেহেতু আমাদের সমাজে জরায়ু সক্ষম থাকার পরও শুধুমাত্র স্পার্ম দেওয়ার দাবিতে ন’মাস গর্ভে রেখে সন্তানের দাবী মা করতে পারে না, সেহেতু এই অপেক্ষাটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের পক্ষে তখন একটা কাজই করা সম্ভব। তা হলো, একটা শিশুকে আইনের নাম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেওয়া।  

যে মেয়েটি মা হলো বা গর্ভবতী হলো, সে কোন হিসেবে ইললিগ্যাল মা বা কোন হিসেবে ইললিগ্যাল গর্ভবতী? সে কি গর্ভে সন্তান ধারণ করেনি? সে কি সেই সন্তানের জন্ম দেয়নি? মেয়ে পালিয়ে ছেলের বাড়িতে চলে যায়, যেহেতু ছেলেরা পালিয়ে মেয়েদের বাড়িতে আসার নিয়ম নাই তাই মেয়েদেরই যেতে হয়। ছেলেরা আসলে কি হতো? সেক্ষেত্রে ছেলের বয়স যদি হয় ২১ এর কম? বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে বিয়ের মাধ্যমে গর্ভের স্বীকৃতি না দিলে সেই সন্তান কি জন্মাবে না? সেই সন্তান কি বাবা মায়ের শুক্রাণু আর ডিম্বাণু ছাড়াই ঐশ্বরিকভাবে এসেছে বলে বিবেচিত হবে? অথবা স্বীকৃতি না দিলে কি গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে?  

এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, কোন মেয়ের বয়স ১৮ না হলেও যদি সে গর্ভবতী হয়ে যায় তবে তার বয়স কমানো হচ্ছে। কিন্তু কোন ছেলে যদি ২১ হওয়ার আগেই বাবা হয়, তবেও কি বিয়ের জন্য তার বয়স কমানো হবে? এরকম কোন আইন কিন্তু করা হলো না।  হিসেবে তাদেরও বয়স কমানো উচিত ছিল। সুতরাং নতুন আইন অনুযায়ী ২১ এর আগে কোন ছেলে ওই অবস্থায় বিয়ে করলে তাকে বাল্যবিবাহের অপরাধে সাজা পাওয়ার কথা। এমন তো নয় বিষয়টা ১৫/১৬ বছরের ছেলেরা বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না অথবা এই বয়সে ছেলেরা বাবা হচ্ছে না! চোখ মুখ খোলা রাখলে দেখতে পাব এই বয়সের ছেলেরা কিছুদিন পর পর দলবেঁধে ধর্ষণটা কিন্তু ঠিকই করছে। তবে কি ধরে নিতে হচ্ছে ২১ এর আগে কোন ছেলে বাবা হয় না বা হবে না? এটাই ফাইনাল? নাকি এক্ষেত্রে বাবার বয়স যাই হোক নারীকে যেহেতু নির্যাতিত হতে হচ্ছে এবং এই বিষয়ে বয়স নির্ধারণ-পূর্বক একটা প্রকাশ্য আইন আছে, তাই নারীর বয়সটাই ফ্যাক্ট?   

ছেলেতে মেয়েতে বিয়ের বয়সের পার্থক্য কেন? 

মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ হলেও ছেলেদের ২১। তিন বছরের গ্যাপ কেন? এই প্রশ্ন রাখার পর প্রথম যে উত্তরটা আসে তা হলো-
‘ছেলেদেরকে মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়।’ 

যেহেতু ধরা হয় একজন মানুষ নুন্যতম ২০/২১ বছর হওয়ার আগে স্বাবলম্বী হয় না, সেহেতু সে পর্যন্ত বয়সটাকে বিয়ের বয়স ধরা হচ্ছে। একই ভাবে মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার দরকার পড়ে না। কারণ মেয়েদেরকে পরনির্ভরশীল করে রাখার জন্য সমাজ বিভিন্ন আইন করে রেখেছে। যার মধ্যে প্রধান দুটো হলো, বিয়ের পর নিজের বাড়ি ত্যাগ এবং তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা। একটা মেয়ের খাওয়া পরার দায়িত্ব বিয়ের আগে বাবা নেবে, বিয়ের পর স্বামী। সে নিজে সে দায়িত্ব নিতে পারে না, নেওয়া উচিতও না। নিবেই বা কিভাবে? স্বাবলম্বী হওয়ার বয়সে পৌঁছানোর আগেই তাদেরকে ভোগের বয়স হিসেব করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের মুখে। অল্প বয়সে বিয়ে একটা মেয়ের জন্য একটা ট্রমা। যেই ট্রমা অল্পবয়সী মেয়েটি আর সারাজীবনে কাটিয়ে উঠতে পারে না। তারা বুঝতেই পারে না, কি তাদের অনুপস্থিত আছে অথবা কি তাদের প্রয়োজন? তারা জীবনভর বাঁচে অন্যের ঘাড়ের উপর ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, তাও আবার সে বাঁচাটাও অন্যের জন্য, নিজের জন্য নয়। একজন অপরিণত, অপরিপক্ব ছেলে বাবা হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারলেও তাকে আইনের মাধ্যমে বাবা হতে নিষেধ করা হচ্ছে দায়িত্ববোধ দেখিয়ে, আর একজন বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য আরকটা বাচ্চা লালন পালন করার উছিলা দেখিয়ে।  

এরপর যে কারণটা আসে তা হলো, 
‘মেয়েরা ছেলেদের থেকে আগেভাগেই পরিপক্ব ও পাকনা হয়ে যায়।’

স্তনের মাংস বৃদ্ধি পাওয়া, পিরিয়ড হওয়া আর গোপন অঙ্গে পশম গজানোকে পরিপক্ব বললে ছেলেদেরও ওই বয়সে দাড়ি গোঁফ গজায়, জনন অঙ্গ সক্রিয় হয়, বীর্যপাতের ক্ষমতা অর্জন করে। ছেলেদের বিচরণক্ষেত্র, জানা শোনা, চলার পরিধি মেয়েদের থেকেও হাজার গুনে বেশি থাকার পরও ধরে নেওয়া হচ্ছে মেয়েরা আগে পেকে যাচ্ছে। বয়ঃসন্ধির লক্ষণ এক বছর পরে আসার মানে তাদের পরিপক্ব হতে মেয়েদের থেকে তিন বছর সময় লাগে। আর এক বছর কম থাকা মানে তাকে যত তাড়াতাড়ি তাড়ানো যায় তত তাড়াতাড়ি তার মুখ খোলার, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অপশনটা সুইচ টিপে অফ করে দেওয়া। পরিণত হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে অন্যের বাড়ি পাঠিয়ে যে পাখির মানব জন্মের সব স্বাধীনতা হরণ করা হয়, সেই হলো সবচেয়ে বেশি পাকনা, সবচেয়ে বেশি পরিপক্ব। এটার পেছনে আরেকটা বড় কারণ, মেয়েদের কম বয়স এবং কচি হলে তাদেরকে সংগম নামক নির্যাতন করে এক ধরনের পৈশাচিক সুখ মিলে পুরুষের। মেয়েরা পেকে যায় আগে, এই অজুহাতে ১৬ বা ১৮ (ছেলেদের তিন বছর আগে) তে বিয়ে দেওয়ার মানে হলো, তারা ভোগের বস্তু, তাদেরকে ততো অমানবিকভাবে পারো ভোগ করো।

এবার একটু পেছনে যাওয়া যাক- বিয়েটা কেন দরকার? 

সোজা কথায় বিয়ে হলো প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন মানুষের ঘনিষ্ঠ হওয়ার এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য একটা সামাজিক অথবা ধর্মীয় বৈধ চুক্তি। সাদা চোখে বিয়ে মাধ্যমে দুজন মানুষের আইনগত ভাবে পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ তৈরি হয় এবং সন্তানের বৈধ পরিচয় নির্ধারণ হয়।   

বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সটা কেন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়? 

বায়োলজিক্যালি প্রাপ্তবয়স্ক শব্দের অর্থ হলো, এমন মানব বা জীবিত প্রাণী যার তুলনামূলকভাবে পরিণত বয়স হয়েছে এবং যাদের যৌন পরিপক্বতা এবং সন্তানধারণ ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। এরকম হলে মেয়েদের রজঃচক্র আর ছেলেদের বীর্যপাতের ক্ষমতা তৈরি হওয়ার বয়সকেই প্রাপ্তবয়স্ক বলার কথা। কারণ এভারেজে ছেলেদের ক্ষেত্রে ১২ বছরে এবং মেয়েদের ১০ বছরেই প্রাপ্তবয়স্কের লক্ষণ দেখা দেয়। তাহলে এই বয়সকে আমরা বিয়ের বয়স হিসেবে ধরছি না কেন? বিভিন্ন দেশে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে নির্ধারণের বয়স বিভিন্ন। সৌদি আরবে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতাধারী যেকোনো নারী ও পুরুষই প্রাপ্তবয়স্ক। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ১৮ বছর বয়সকেই প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে ১৮ এর আগে কোন মানুষের বিয়ে হলে সেটা হবে বাল্যবিবাহ। বিয়ের মাধ্যমে একজন মানুষ শুধু সন্তানই উৎপাদন করে না, সাথে থাকে পারস্পরিক বিশ্বাস, নির্ভরতা এবং দায়িত্ববোধ। ১৮ এর আগে কিশোর বয়সে এই দায়িত্ব নেওয়ার মত যোগ্যতা বা মানসিক পরিপক্বতা তৈরি হয় না বলেই একজন মানুষের বিয়ের জন্য বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।   

বাল্যবিবাহের কারণ কি? 

বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয় ‘কন্যাদায়’। কন্যাসন্তান একটা পরিবারের জন্য অন্যতম প্রধান বোঝা। কন্যাকে ঘরে বসিয়ে রেখেও ওরকম কোন লাভ নেই, কারণ কন্যা সন্তানেরা সম্পত্তিতে ভাগ পায় ছেলে সন্তানের অর্ধেক, তাও আবার বেশিরভাগ কন্যা সেটা দাবী করে না। বাংলাদেশের মত একটা দরিদ্র দেশে কন্যাদায় থেকে মুক্ত হতে পারলে পিতামাতা হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচে। কারণ এতে করে সংসারের খরচ কিছুটা কমে। এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে যেমন ইভ-টিজিং, ধর্ষণ, ধর্মের অনুশাসন ইত্যাদি। যেহেতু মেয়েটা পরিবারে ওরকম অংশীদার না, বিয়ের পর অন্য বাড়িই যাবে, দিয়ে দাও বিয়ে। যেহেতু সংসারের খরচ চালতে হিমশিম খাচ্ছি, মেয়েকে খাওয়ায়ে কি লাভ? দিয়ে দাও বিয়ে। যেহেতু মেয়েটি ঘর থেকে বের হলে বাজে ছেলেরা উৎপাত করে, দিয়ে দাও বিয়ে। যেহেতু মেয়েটি ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে-তাকে নিয়ে সমাজে মুখ দেখানো দায়; দিয়ে দাও বিয়ে (এক্ষেত্রে পাত্রের বয়স ৭০ হলেও সই, পাত্রটি ওই মেয়ের ধর্ষক হলেও সই)।

বাল্যবিবাহের কারণগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ক্ষেত্রে স্বার্থ দেখা হচ্ছে পুরুষের। বলি হচ্ছে নারী। পুরুষের বয়স কিন্তু ২১ না হলে বিয়ে করা চলবে না। সেখানে ১৬ বছরের মেয়ে শিশু প্রতিনিয়ত ধর্ষণের স্বীকার হবে। কেবল মাত্রে নারীরা বলি হয়ে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্র রক্ষা করবে।   

যেহেতু ১৮ এর আগে বিয়ে মানে শিশু বিয়ে, আর শিশুর সাথে সঙ্গম হলো ধর্ষণ সেহেতু মিনিমাম (ম্যাক্সিমাম নাই বললাম) ২১ বছরের ছেলেদের দ্বারা শিশু মেয়েদের ধর্ষণের রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য এমন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ’ লেখা হলেও আদতে এটি একটি ‘বাল্য বিবাহ প্রদান’ আইন হয়েছে। যেখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বানানো মিথ্যা মর্যাদাকে এবং পুরুষদের অনৈতিক চাহিদাকে। এই আইনের মাধ্যমে একটা বাবাও তার কন্যাকে দায়মুক্ত না করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে না, এতে করে একটা পরিবারের দরিদ্রতাও সিকি-খানেক কমবে না, যে সকল মেয়েরা ১৮ এর আগে মা হয়-তাদেরও মা হওয়া বন্ধ করতে পারবে না, একটা ধর্ষণ বা ইভ টিজিংও বন্ধ হবে না। কিন্তু যা হওয়ার হবে, যা চায় পুরুষতন্ত্র তা হবে। একটা শিশুকে জোর করে জীবনের কূল কিনারা বিহীন অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। বলি হচ্ছে নারী, বলি হবেও নারী, আর পুরুষেরা কচি কচি মেয়ে ধর্ষণ করে স্বামীর মর্যাদা নিয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াবে।   

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে প্রতি একশো জনের মধ্যে ৬৬ জন্য বাল্য বিয়ে করে, বাল্যবিবাহের রেটে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম, এবং পৃথিবীতে চতুর্থ। এবার শুধু ফার্স্ট হওয়ার অপেক্ষা। 

লেখক: প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত