প্রচণ্ড ব্যথায় আর্তনাদ করছে খাদিজা
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৪৭
সিলেটের ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের নৃশংস হামলায় আহত কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের শারীরিক উন্নতির পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথার অনুভূতি ফিরে আসছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক।
মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া।
খাদিজার বাবা চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, খাদিজার দুই হাতে জখম রয়েছে। ডান হাতে জখমের ব্যথার অনুভবে কান্নাকাটি করছে। সে চোখ খুলছে এবং ডাকলে সাড়া দিচ্ছে। এমনকি পরিচিতদের চিনতেও পারছে। তবে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম থাকায় সে প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
তিনি আরোও বলেন, ‘সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে যখন তাকে ডান হাতের অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি দেখা করেছিলাম। তখন তাকে বলেছি আমি তোমার বাবা, আমাকে চিনতে পারছ? তখন সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছে। পরে অপরিচিত একজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলেছি তাকে চিনতে পারে কি না, তখন সে মাথা নাড়িয়ে না বলেছে।
মাসুক মিয়া বলেন, ‘অপারেশনের পর হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) দেখতে যাই। তখন তার জ্ঞান ছিল। দেখলাম মেয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে আমাকে বলেন, খাদিজার শারীরিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথার অনুভূতি ফিরে আনছে।’
খাদিজার সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য এটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন চীনে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত খাদিজার বড় ভাই শাহীন আহমেদ।
তার দাবি, মস্তিষ্কের সিগন্যাল ছাড়া মানুষের শরীরের ব্যথা অনুভূত হয় না। তার মস্তিষ্ক যতটা কাজ করছে ততটাই শরীরে ব্যথা অনুভব করবে।
তাকে নলের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে খাবার খাওয়ানো হবে। তারপর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হবে।
মাসুক মিয়া বলেন, ‘চোখের সামনে মেয়ের কষ্ট বাবা হিসেবে কীভাবে সহ্য করব। কী অপরাধ ছিল আমার মেয়ের। বিনা অপরাধে সে এত কষ্ট সহ্য করছে। মেয়েটাকে দেখতে গেলে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।’
খাদিজার বাবা বলেন, ‘দেশে এসে মেয়ের অবস্থা দেখে নিজেকে কীভাবে সামলে রাখব বুঝতে পারছিলাম না। মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, আমি কি মেয়ের নিরাপত্তা দিতে পারলাম না?’
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় খাদিজার ডান হাতের সফল অস্ত্রোপচার শেষে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, খাদিজার বাঁ হাত অবশ থাকার কারণে শুধু ডান হাতেরই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। মাথার ডানপাশে আঘাত একটু গুরুতর হওয়ায় বাঁ হাত অবশ হয়েছে। তাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হবে। আশা করছি শিগগিরই তার বাঁ হাতের অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে।
এছাড়া খাদিজার পায়েও কিছু জখম রয়েছে, তবে সেগুলো তেমন গুরুতর নয় বলে জানান চিকিৎসক মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যেসব কাজ আগে করা দরকার সেগুলোই আমরা গুরুত্ব দিয়ে আগে করছি। আমাদের প্রধান কাজ হলো তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা।’
এদিকে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে খাদিজার বাবা জানিয়েছেন, খাদিজার অবস্থা ভালো পর্যায়ে আসতে আরও ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে।
সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমার পক্ষে করানো সম্ভব নয়।’
স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা আমার মেয়ের প্রতি খুবই আন্তরিক। তারা নিজের মেয়ে মনে করে তার চিকিৎসা করছেন।’
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর বিকেলে মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজা বেগম নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম।