'এই দমন পীড়ন সরকারের নৈতিক পরাজয়ের চিহ্ন'
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০১৬, ০২:০১
সুন্দরবন রক্ষায় তরুণদের সাইকেল মিছিল কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আজ সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তরুণদের স্বত:ষ্ফুর্ত উদ্যোগে ‘বাঁচাও সুন্দরবন' শ্লোগানে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে একটি সাইকেল র্যালী কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচি বানচাল করার জন্য ছাত্রলীগ আগে থেকেই শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করে এবং সাইকেল র্যালী বের হতে গেলে তাদের উপর আক্রমণ করে। এছাড়া সাইকেল র্যালীতে যোগদানের জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা যোগ দিতে আসছিলেন পথে পথে তাদের উপর হামলা করা হয় এবং সাইকেল ভাংচুরসহ তাদের জখম করা হয়। শহীদ মিনারে অংশগ্রহণকারীরা অবরুদ্ধ অবস্থাতেই গান, কবিতা ও শ্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। সরকার, কোম্পানি ও একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার তত্ত্বাবধানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন হল থেকে জোরপূর্বক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে শহীদ মিনারে সন্ত্রাসী তৎপরতায় যোগ দিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক ঘন্টা ধরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতা চলাকালে উপস্থিত পুলিশ নীরব ও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে।
তারা বিবৃতিতে বলেন, একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে সকল বাধা অতিক্রম করে সাইকেল র্যালী শুরু হয়ে যখন প্রেস ক্লাবের দিকে যাচ্ছিল তখন পুলিশ জলকামান দিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে। পেছনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে আশিক নামক একজন অংশগ্রহনকারীর হাত ভেঙ্গে দেয় এবং আরো কয়েকজনকে আহত করে। পথে পথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতায় অন্তত ২০ জনেরও বেশি আহত হয়। এছাড়া পুলিশ আরো ৫জন নিরীহ সাইকেল আরোহীকে আটক করে এবং পথে পথে আরও অনেককে হেনস্তা করা হয়।
তারা আরো বলেন, সাইকেল র্যালীর মাধ্যমে সুন্দরবন রক্ষার পক্ষে তরুণদের মত প্রকাশের এই কর্মসূচির উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশের সন্ত্রাসী হামলায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তরুণদের স্বত:ষ্ফুর্ত উদ্যোগে আহুত এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এরকম ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে সরকার নিজেদের নৈতিক ভাবে এবং যুক্তিতে পরাজিত হিসেবে প্রমাণ করলো। একইকারণে গত কিছুদিনে খুলনা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, বগুড়াতেও সরকারি বাহিনী সুন্দরবন রক্ষার সমাবেশ ও মিছিল নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। একমাস পার হয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা দিলীপ রায়কে এখনও আটক রাখা হয়েছে। যুক্তিতে পরাজিত হয়ে, দেশীবিদেশী কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে, সুন্দরবন বিনাশে সরকার শক্তিপ্রয়োগের পথ গ্রহণ করছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকা সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনের ন্যায্যতা আরও জোরালোভাবে প্রমাণ করছে। যুক্তির জোরে, নৈতিক সাহসে এবং সুন্দরবন রক্ষা তথা দেশ রক্ষার দায়বোধ থেকে আন্দোলনের যে স্বতস্ফ’র্ত জোয়ার তৈরি হয়েছে তাকে দমনপীড়ন, ভয়ভীতি এবং বিজ্ঞাপনী প্রচার দিয়ে থামানো যাবে না। আমরা সরকারের কাছে আবারও দাবী জানাই অবিলম্বে সারা দেশে আন্দোলনের উপর দমনপীড়ন বন্ধ করুন, দীপক রায়সহ আটক সকলকে মুক্তিদান করে জনগণের পক্ষে দাঁড়ান- রামপাল চুক্তি বাতিল করুন, সুন্দরবনকে বাঁচতে দিন। কালক্ষেপন করে সুন্দরবন আন্দোলনের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা করে নিজেদের মুখে আর চুনকালি লাগাবেন না।