জঙ্গিদের ব্রিফিং দেয়া তামিম কোথায়?
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৩০
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরীর নাম আসে। সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ড ও হামলার হোতা হিসেবে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী বরখাস্ত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক এবং বাংলাদেশে আইএস এর কথিত সমন্বয়ক কানাডীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
তামিম জেএমবির নেতা বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তবে আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে তাকে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে।
তামিম ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরী, যিনি একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য, তার নাতি।
তামিম চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে আইজিপির সঙ্গে থাকা মনিরুল সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনার আগেও বাংলাদেশে তামিমের অবস্থান জানা যায়।”
তামিম দেশ ত্যাগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সে দেশত্যাগ করেছে, এমন তথ্য আমাদের (গোয়েন্দা) কাছে নেই।”
কানাডার উইন্ডসরের বাসিন্দা তামিম ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে নিখোঁজ বলে জানান মনিরুল।
তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তখন তার জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানা যায়নি। তদন্তে ২০১৫ সালে তার নাম বেরিয়ে আসে।
একই প্রশ্নে আইজিপি শহীদুল বলেন, “সে দেশে থাকতে পারে, দেশের বাইরেও থাকতে পারে। আমরা তাদের খুঁজছি। গুলশান ঘটনার আগে দেশেই ছিল।”
তিনি বলেন, তামিমের সঙ্গে জেএমবির ‘নতুন ধারার’ একটি গ্রুপ রয়েছে এবং তাদের পুলিশ ‘মোটামুটি’ চিহ্নিত করতে পেরেছে। তামিমকে গ্রেপ্তার করা গেলে ‘তার উপরে’ কে বা কারা আছে- তা জানা সম্ভব হবে।
তামিমকে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলে মনে করছে পুলিশ। ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের নয়জন নিহতের পর যে মামলা হয়েছে তাতেও কানাডার উইন্ডসরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী তামিমকে আসামি করা হয়েছে।
গুলশানের ঘটনায় তামিম চৌধুরীর সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরে আইজিপি ব্রিফিংয়ে বলেন, “তামিম তাদের রিক্রুট করেছে, ঘটনার আগে তাদের ব্রিফিং দিয়েছে, তাদেরকে পাঠিয়েছে এবং ঘটনার সময় তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে, আমরা সে তথ্য পেয়েছি।”
শহীদুল হক বলেন, "গুলশান, শোলাকিয়া এবং কল্যাণপুরের ঘটনায় যারা ধরা পড়েছে, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ‘মাস্টার মাইন্ড’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে এ কথা স্পষ্ট যে এই জঙ্গিরাই এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, তিনটি ঘটনা একই গ্রুপের।”
আইজিপি বলেন, গুলশান ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন অনেক তথ্য পেয়েছে। তারপর শোলাকিয়ার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালাচ্ছিল। সেখান থেকেই ঢাকায় আরেকটি জঙ্গি হামলার প্রস্তুতির কথা পুলিশ জানতে পারে এবং কল্যাণপুরে অভিযান চালায়।
২৬ জুলাই রাতে কল্যাণপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় সোয়াটের বিশেষ অভিযানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি, তারা যদি সারেন্ডার করে তাহলে তাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তারা তো সারেন্ডার করেই নাই, তারা পুলিশ হত্যা করতে যুদ্ধ করবে এমন কথা বলেছে।”
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, "হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা সরাসরি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্যে আমরা পাইনি। যারা ছিল তাদের মধ্যে অনেকে আগে জামায়াত-শিবির করেছে।”