অবশেষে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেলেন লুসি হেলেন
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০১৮, ০০:২৩
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেলেন ৮৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন। ৫৭ বছর ধরে এদেশে বাস করে এদেশের মানুষের জন্য যে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ মানবতা দেখিয়েছেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুসি হেলেনের কাছে সম্মানসূচক নাগরিকত্বের সনদ হস্তান্তর করেন।
৩১ মার্চ (শনিবার) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে লুসি হেলেনকে এ সম্মাননা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। আর এর মাধ্যমে লুসির দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পূরণ হলো।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ রেহানা উভয়ই ৮৭ বছর বয়স্ক মানবতাবাদী লুসি হেলেনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
লুসি হেলেন নাগরিকত্ব পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন, তবে তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি তবে ‘আজ আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে আমার সেই আশা পূরণ হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্ম হয় লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট এর। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। ১৯৭১ সালে যশোর ক্যাথলিক চার্চের স্কুলে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন সিস্টার লুসি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চার্চটি বন্ধ করে মিশনের সবাই খুলনায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কিন্তু পালিয়ে না গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে লুসি ছুটে যান পাশের ফাতেমা হাসপাতালে। সেখানে আহত অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশুর কান্না দেখে আপ্লুত লুসি অসহায় মানুষদের সেবা দিতে চাইলেন।
ভিনদেশি এক নারীর এমন আগ্রহ দেখে চিকিৎসকরা বিস্মিত হলেও সম্মতি দেন। এরপর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা দিতে থাকেন লুসি।
তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনো মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন ৮৭ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নারী। এমনকি নিজের জন্মভূমিতেও ফিরে যাননি। ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের পর এখনো বাংলাদেশকে ভালোবেসে বরিশাল নগরের অক্সফোর্ড মিশনে দুস্থ শিশুদের অবৈতনিক ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার শেষ ইচ্ছা তাকে যেন এই বাংলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হয়। আর তাই মৃত্যুর আগে এই দেশের নাগরিকত্ব পেতে চান লুসি।
মাত্র ৭৫ পাউন্ড অবসর ভাতা পেয়ে অক্সফোর্ড মিশনের একটি জরাজীর্ণ কক্ষে থাকেন তিনি এখন। এই স্বল্প আয় থেকেই টাকা জমিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন করেছেন এই জনহিতৈষী নারী। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। তবু লুসির বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তার ব্যাপারে জানতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই তাকে নাগরিকত্বের অনুমতি দিয়ে দিবেন।
লুসি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর আর আমার জন্মও একই দিনে। এটা কাকতালীয় হলেও বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়। হয়তো এটা ঈশ্বরের খেয়াল! অবসর গ্রহণের পর সবাই দেশে ফিরে যায়। কিন্তু আমি এই দেশকে এত ভালোবেসে ফেলেছি যে, এর মায়া ছেড়ে যেতে মন সায় দেয়নি। তাই জীবনের সেরা সময়গুলো কাটানো এই বরিশালেই ফিরে এসেছি। মৃত্যুর পর এখানের মাটিতেই সমাহিত হতে চাই।’