ধূমপান স্বাস্থ্যের নয়, মেয়েদের পক্ষে ক্ষতিকর!

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০১৭, ২২:০৪

সিগারেট স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হ্যাল্থ। তবে এটা ঠিক কাদের জন্যে সেটা নির্ধারণ করাটা কাদের দায়িত্বে? আর কে? মানুষ। মানুষই তো সেই প্রকৃত সৃষ্টি যে নির্ধারণ করে ঠিক/বেঠিক। তবে অনেকেই বলে, সব ক্ষেত্রে নয়। আমি যদিও মনে করি সব ক্ষেত্রেই। কারণ আইন সম্পর্কে জ্ঞানটা সীমিত হলেও একতরফা বানানো হয় কিনা সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। 

যাক গে, যা বলছিলাম... 

সম্প্রতি একটি ছবি দেখে মাথাটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে আছে। ছবিটি ছিল এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর যে নির্দ্বিধায় রাস্তায় বসে সিগারেট ফুঁকছিল আর ঠিক তখনই তার স্বাধীনচেতা অভ্যেসের বাঁধ ভাঙতে এগিয়ে এলেন নিজেকে অতি শিক্ষিত মনে করা এক ব্যক্তি যিনি ট্রাফিক সিগন্যালের অজুহাতে বাসে বসে জানালার বাইরে দেখতে দেখতে একটি ছবি তুলতে এক মুহুর্ত বিলম্ব করেননি। এবার এই বিষয়ে প্রচুর কথা যেমন তিনি বলতে পারেন, তেমনি আমাদের মনেও যে প্রশ্নেরা ভিড় করছে না সেটা ভাবলে তিনি প্রচণ্ড ভুল করবেন। 

প্রথমত, মেয়েটি নিজের পয়সায় সিগারেট কিনে ফুঁকছিল, আপনার টাকা ফেলতে যায়নি, চুরি করেনি, লোকালয়ে যে সমস্ত কুকীর্তি হয়ে থাকে সেরকম দণ্ডনীয় কোন অপরাধই সে করেনি (আমি মনে করি)। দ্বিতীয়ত, আপনি যে চুরি করে ওই ছবিটা তুলেছেন তা সেটা যদি কোন ভাবে ওই মেয়েটির কানে পৌঁছোয় এবং তাতে সে কোন কিছু একটা করে বসে তার দায় কি আপনি নেবেন? তৃতীয়ত, মেয়েটি আপনার মেয়েও হতে পারতো। কারণ এমন অসংখ্য ছেলে/মেয়ে রয়েছে যারা বাড়িতে ভদ্র ভাবে থাকে (মানে বিড়ি, সিগারেট, মদ জাতীয় দ্রব্য পানে যাদের আপত্তি ও যারা এই অভ্যেস করাকেই অভদ্রতা বলে মনে করেন, তাদের হয়েই বলছি), আর বাইরে বেরিয়ে মা/বাবাদের আড়ালেই সে সব গ্রহণ করে থাকে। তাই সে ক্ষেত্রে যদি সেই মেয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার কোন আত্মীয়া হত তাহলে কি আপনি ছবি তুলে সেটা ফেসবুকের মতো সামাজিক একটি গণমাধ্যমে পোস্টটা করতে পারতেন? পারতেন না তো? 

কেন পারলেন জানেন? কারণ সে তো আপনার বাড়ির লোক নয়। পরের মেয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? মেয়ে যখন সিগারেট ফুঁকছে তখন সেই মেয়ে খারাপ। এটাই হচ্ছে আসল কথা। কিন্তু যত দূর আমার খেয়াল আছে, সিগারেটের বাক্সের গায়ে 'স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হ্যাল্থ' লেখা থাকে। কই? 'স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু গার্লস' লেখা থাকে না তো। এই রূপ চিন্তা ভাবনা নিয়ে যদি কেউ নিজেকে শিক্ষিত মনে করেন তাহলে একে বলা হোক ‘ছাই’। কারণ সেই ছবি তুলতে গিয়ে যখন তিনি বাসের কণ্ডাক্টারকে জিজ্ঞেস করেন যে একে দেখে কি বলবে, এবং বাসে কণ্ডাক্টার যখন উত্তরে বলে ‘ওমেন এম্পাওয়ারমেণ্ট’  তখন আর যাই হোক এটা প্রমাণ হয়েই যায় যে তার দূরদৃষ্টি ঠিক কতটা। নিজের কর্মে এতটাই নড়বড়ে যে চোরের সাক্ষী মাতাল এর মতই এক সাক্ষী জোগাড়ে তিনি মতায়ন ছিলেন। সে আর 'ওমেন এম্পাওয়ারমেণ্ট' এর কিই বা বোঝে? 

সিগারেট ফোঁকা যদি ওমেন এম্পাওয়ারমেণ্টের পরিচয় হয় তাহলে ধূমপান সাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, আমিই জোর গলায় বলবো ধূমপান মেয়েদের পক্ষে ক্ষতিকর। ছেলেরা অবাধে খাও। খারাপগুলো মেয়েদের বেলাতেই, ছেলেদের নয়।

লেখক: লেখক ও আলোকচিত্র সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত