মানবাধিকার কর্মীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি! (ভিডিও)
প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৬, ১৭:০২
গত ১০ জুন, শুক্রবার পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী মারভি সিরমেদকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি এমনকি তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের সিনেটর হাফিজ হামদুল্লাহ। পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে উলেমা-ই ইসলাম ফজল (জেইউআইএফ) এর প্রতিনিধি হাফিজ হামদুল্লাহকে এর আগে লাইভ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নোংরা ভাষায় কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
ঐ অনুষ্ঠানটি রেকর্ড হবার পরপরই সিরমেদ তার এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ফেসবুকে লিখেন যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা ও সিনেটরকে অভিযুক্ত করার পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
সিরমেদ তার ফেসবুকে লিখেন, আমি মাত্রই নিউজ ওয়ান এর অনুষ্ঠানে (নাদিয়া মির্জা শো) এক ভয়ংকর মানসিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেলাম যখন জেইউআইএফ এর হাফিজ হামদুল্লাহ ব্যারিস্টার মাশরুর এর একটি মন্তব্যে ভীষণ রেগে যান। যখন আমার কথা বলার পালা আসে আমি শুরু করি এভাবে যে “আমি মাশরুর সাহেবের সাথে এই ক্ষেত্রে একমত যে...” আর এখানেই হামদুল্লাহ আমাকে থামিয়ে দেন এবং অজ্ঞতা ও রূঢ়তার সাথে কথা বলতে শুরু করেন। আমিও তাকে একইভাবে জবাব দিতে থাকি। আর তখনই তিনি আমাকে সম্ভাব্য সব রকম নোংরা ভাষায় গালি দিতে থাকেন। আমাকে ডাইনী সম্বোধন করে তিনি বলেন, “তোমার সালোয়ার খুলে ফেলবো আর তোমার মায়েরও”। আমি তখন তাকে তার নিজ পরিবারের নারীদের কথা মনে করিয়ে দেই আর ঠিক তখনই তিনি আমাকে মারতে আসেন। এই সবকিছুই ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে। ফায়াজ উল হাসান চৌহান তাকে ধরে রাখেন যার ফলে আমি তার আঘাত থেকে বেঁচে যাই। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আর এই ধর্ম ব্যবসায়ী এই সবকিছু করছিলেন যখন তিনি রোজা ছিলেন।
দুর্ভাগ্যবশতঃ এসব ঘটনা ঘটে যখন পাকিস্তানের তথাকথিত ‘অনার কিলিং’, (পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে কোন আত্মীয় বিশেষ করে কোন মেয়ে বা নারীকে হত্যা করার প্রথা) এবং এই ব্যাপারে কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি (১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংগঠন যারা সরকারকে আইন ও সমাজের ধর্মীয় দিকগুলো সম্পর্কে ঐচ্ছিক পরামর্শ দেন) এর নীরবতার ব্যাপারে একটি অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং চলছিল। বিশেষত নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সত্যতা স্বীকারেও কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি (সিআইআই)-কে দোষী করা হয়েছে।
এই কাউন্সিল সম্প্রতি সমালোচিত হয় একটি আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য যা স্বামীকে তার স্ত্রীকে হালকা প্রহার এর অনুমতি দেয়। ঘটনাক্রমে হামদুল্লাহ সিনেট এর ধর্মীয় ও আন্তঃবিশ্বাস সমন্বয় কমিটির পদে রয়েছেন।
সেই টেলিভিশন শো এর ভিডিওতে দেখা যায়, প্যানেলিস্ট ব্যারিস্টার মাশরুর সিআইআই চেয়ারম্যান মাওলানা শেরানি ও সিনেটর হামদুল্লাহকে ‘ঘুমন্ত মাতাল’ সম্বোধন করে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখেও না দেখার ভান করার জন্য তাদের সমালোচনা করেন। উপস্থাপক তারপর সিরমেদ এর দিকে ফিরে তাকে এই ব্যাপারে মতামত দিতে বলেন। সিরমেদ এসময় মাশরুরের পক্ষ নিলে হামদুল্লাহ চিৎকার শুরু করেন। এই তর্ক বিতর্ক এক সময় এমন পর্যায়ে চলে যায় যে হামদুল্লাহ সিরমেদকে ধর্ষণের হুমকি দেন।
পরিমার্জিত ভিডিও ক্লিপে ধর্ষণের হুমকি ও গালি দেয়ার অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিরমেদ তার ফেসবুক পেজে এই শারীরিক লাঞ্ছনা চেষ্টার বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন এবং পরবর্তীতে হামদুল্লাহের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার পর অন্য একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও তিনি তা বর্ণনা করেন। শারীরিক লাঞ্ছনা চেষ্টার সেই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত না হলেও সিরমেদ এর সমর্থনে টুইট করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ব্যারিস্টার মাশরুর যা তার বক্তব্যকে আরো দৃঢ় করেছে।
সিরমেদ তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার পর আরো অনেকেই কথা বলতে এগিয়ে আসেন যারা হামদুল্লাহর কাছে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। সংসদ সদস্য ড. আরিফ আলভি সিরমেদকে সমর্থন করেন আর নিজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রানা ওয়ালিদ হামদুল্লাহর কাছে অতীতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন অনেকের একটি তালিকা প্রকাশ করেন যার মধ্যে কয়েকজন টিভি উপস্থাপকও রয়েছেন।
এর আগেও সিরমেদ হামদুল্লাহের সাথে কয়েকটি টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। হামদুল্লাহর রাজনীতির সাথে তার অসংখ্য দ্বিমত তিনি কখনোই লুকোছাপা করেননি। কিন্তু এবারই প্রথম হামদুল্লাহ তাকে কথা বলতেও বাধা দেন এমনকি সহিংস হুমকিও দেন। এদিকে টিভি স্টুডিওর সেই ফুটেজ এর পরেও অনেকেই অনলাইন জগতে দাবি করেন যে সিরমেদই এই লড়াইকে উস্কে দিয়েছেন। একইসাথে সিরমেদ এর সমর্থকরাও পাল্টা যুক্তি দিতে থাকেন।
সিনেটর শেরি রেহমান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সিনেটর হামদুল্লাহর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে জনগণের যে দাবি তার সাথেই সুর মেলান।
বিখ্যাত নারী অধিকার কর্মী গুলালাই ইসমাইল সিরমেদকে হুমকি দেয়ার জন্য হামদুল্লাহর বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করেছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই সিনেটর এর আচরণ নিয়ে তার রাগ ও হতাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি লিখেছেন, "মোল্লা হাফিজ হামদুল্লাঝ শুধুমাত্র যৌন বিষয়ক নোংরা শব ব্যবহার করেননি, তিনি মারভি ও তার মাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাসম্পন্ন একজন পুরুষ হলে তিনি তার ইচ্ছামতো যেকোন নারীকে ধর্ষণ করতে পারবেন, নির্যাতন করতে পারবেন। তাকে শুধুমাত্র গণমাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত না, বরং তাকে আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো উচিত কারণ তিনি সব নারীর জন্যই এক হুমকি স্বরূপ”।