আরো উদার গর্ভপাত আইনের সুপারিশ
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:২২
গর্ভপাতের আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ এতে বলা হয়েছে, গর্ভ নিরোধক ওষুধপত্রে কাজ না হবার দরুণ কোনো অবিবাহিতা বা সিঙ্গল নারী যদি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি বৈধভাবে গর্ভপাত করাতে পারবেন৷
গর্ভপাতের নিয়ম-কানুন আরো উদার করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৭১ সালের ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি' আইন সংশোধনের যেসব সুপরিশ করেছেন, তা বর্তমানে ক্যাবিনেটের বিবেচনাধীন আছে৷ অনুমোদিত হবার পর তা সংসদে পেশ করা হবে আগামী বাজেট অধিবেশনে৷ সুপারিশের মধ্যে আছে কোনো নারী সিঙ্গল বা অবিবাহিতা কিংবা কুমারি হন, গর্ভনিরোধক ওষুধপত্রে কাজ না হবার দরুণ যদি তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে তিনি রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সাহায্যে যদি গর্ভপাত করাতে চান, তাহলে তা বৈধ বলে ধরা হবে৷ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে মোদী সরকার যত শীঘ্র সম্বব তা কার্যকর করতে উদ্যোগী৷ বলা হয়েছে, বর্তমান আইন বৈষম্যমূলক৷ কারণ কেবলমাত্র বিবাহিতা নারীরাই গর্ভ নষ্ট করতে পারেন আইনসম্মতভাবে৷
যারা সিঙ্গল বা অবিবাহিতা, তারা যদি ‘কনট্রাসেপ্টিভ' পদ্ধতি ঠিকঠাক কাজ না করার কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তাহলে তারা অবাঞ্ছিত গর্ভ নষ্ট করতে গোপনে ছুটে যান অ-প্রশিক্ষিত, আনাড়ি ডাক্তার বা হাতুড়ে ধাইদের কাছে৷ এটা করতে গিয়ে বেশরভাগই হয় মারা যান, না হয় শারীরীক ব্যাধির শিকার হন, বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক উচ্চ আধিকারিক৷ সরকার এইসব অবাঞ্ছিত মাতৃত্ব এড়াতে এর সুযোগ-সুবিধার পরিসর আরো বাড়াতে চায়৷ যুক্ত করতে চায় ‘অক্সিলিয়ারি নার্সিং মিডওয়াইফ' বা এএনএম এবং দক্ষ ডাক্তারদের৷
শুধু তাই নয়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়ুশ-এর মতো হোমিওপ্যাথি এবং প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিত্সক-নার্সরা বিনা ছুরি-কাঁচিতে গর্ভপাত করাতে পারবেন৷ এর ফলে বহু অবিবাহিতা বা সিঙ্গল কিংবা কুমারি নারী বৈধভাবে এবং নিরাপদে অনাকাঙ্খিত গর্ভ নষ্ট করাতে পারবেন৷ এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন সেইসব নারী, যারা ধর্ষণের শিকার, যারা দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী৷ তবে সেটা সাধারণত করতে হবে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে৷ এখন ডাক্তারদের পরামর্শ মতো ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত বৈধ৷ তবে দেখা গেছে গর্ভের সন্তানের অস্বাভাবিকতা ২০ সপ্তাহের আগে ধরা পড়ে না৷ সবথেকে বড় কথা, নতুন সংশোধনীতে নারীদের দেহ ও মনের ওপর তার নিজস্ব অধিকার কায়েম হবে৷ ধর্ষিতা, কুমারি, সিঙ্গল বা অবিবাহিতারা সামাজিক লজ্জা ও পারিবারিক কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচবেন৷ এমনটাই মনে করেন নারীদের যৌন অধিকার, মাতৃত্ব এবং গর্ভপাতের ফলে মৃত্যুর হার কমানোর কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত এনজিও আপস-এর নির্বাহিক পরিচালক৷ আশা করা যায় যত শীঘ্র সম্ভব এই আইন সংসদে পাশ হবে এবং সরকার তা কার্যকর করবেন, বলেন তিনি৷
ওদিকে সম্পূর্ণ বিপরীত মত প্রকাশ করেন নারীবাদী স্বেচ্ছাসেবী কর্মী শাশ্বতী ঘোষ৷
তিনি বলেন, "মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) ১৯৭১ সালের আইনে কোথাও বলা হয়নি যে, কোনো সাবালিকা বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীর গর্ভপাত বৈধ নয়৷ যেটা নির্দিষ্ট করে বলা আছে, তাহলে তাঁকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং গর্ভ সঞ্চারের ২০ সপ্তাহের মধ্যে তা করাতে হবে৷ আর মেয়ে যদি নাবালিকা হয়, তাহলে তার অভিভাবকের লিখিত সম্মতি থাকতে হবে"৷
তাহলে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেকে তারা মৃত্যর মুখে ঠেলে দেন কেন? এর জবাবে বলেন, "সরকারি হাসপাতালে প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো নারী গর্ভপাত করাতে পারেন বৈধভাবে৷ এটা প্রচার করা হয় না৷ এমনকি মুখেও বলা হয় না৷ কেন হয় না, তা সরকারই বলতে পারবেন৷ কোথাও লেখা থাকে না যে, হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন না৷ সরকারি হাসপাতালগুলির কোথাও এ বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেখা যায় না৷ হাসপাতালে গেলেও নানা রকমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের৷ ফলে হাতুড়ে ডাক্তারদের পোয়া বারো৷ পুরো ব্যাপারটাকেই মনে হয়, ন্যাকামি৷ তবে হ্যাঁ, গর্ভস্থ সন্তানের যদি প্রতিবন্ধী হবার আশংকা আছে, এই মর্মে রেজিস্টার্ড ডাক্তারা যদি মনে করেন, সেক্ষেত্রে তা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে"৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক নাবালিকার গর্ভ সঞ্চারের ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পরও ব্যতিক্রম হিসেবে মেডিক্যাল বোর্ডের সম্মতিতে তার গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেন শীর্ষ আদালত৷ রায় দেন, মেয়েটির দেহ ও মনের অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্রের বৈধ স্বার্থের একটা ভারসাম্য থাকা দরকার৷ গর্ভস্থ সন্তানের বিকলাঙ্গ হবার আশংকা থাকলে বা মায়ের জীবনের গুরুতর ঝুঁকি থাকলে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে ২৪ সপ্তাহের পরও ব্যতিক্রম হিসেবে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে৷ পাশাপাশি, গর্ভের সন্তানের বা ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য ‘আলট্রাসাউন্ড' পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার ওপর জোর দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ দেখা গেছে, ভ্রুণ যদি কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তা নষ্ট করে ফেলার একটা প্রবণতা সমাজে থেকেই গেছে৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে