ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ হলেন দুই নারী
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:১০
নতুন প্রশাসনের জন্য প্রথমবারের মত দুই নারীকে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর নিকি হেইলিকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায় দেখা যাবে। আর বিলিয়নেয়ার রিপাবলিকান বেটসি ডেভোস পাচ্ছেন ট্রাম্প সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর পদ। তাদের দুজনের নিয়োগ কার্যকর হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। অবশ্য এবারের নির্বাচনে নারীদের নিয়ে নানা মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ট্রাম্পের জয়ের পাশাপাশি সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রিপাবলিকানরা।
রয়টার্স লিখেছে, এর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প তার আগামী প্রশাসনের শীর্ষপদগুলোতে পুরুষদের বেছে নিলেও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ও শিক্ষামন্ত্রী পদে দুই নারীকে বেছে নিয়ে অনেককেই চমকে দিয়েছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, ভোটের প্রচারের দিনগুলোতে এই দুই নারীকেই ট্রাম্পের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। অভিবাসন নীতি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে হেইলি বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের ভক্ত নন। আর ডেভোস নিউ ইয়র্কের এই টাইকুনকে বলেছিলেন অবাঞ্ছিত।
অভিবাসী ভারতীয় শিখ বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া হেইলির প্রথম নাম ছিল- নিম্রতা নিকি রাধোঁয়া। বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ৪৪ বছর বয়সী এ রিপাবলিকান সাউথ ক্যারোলাইনার প্রথম নারী ও সংখ্যালঘু গভর্নর। ২০১৫ সালে হেইলি সাউথ ক্যারোলাইনা রাজ্যের স্টেট ক্যাপিটল থেকে ‘কনফেডারেট ব্যাটল ফ্ল্যাগ’ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট- উভয় দলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।
ট্রাম্পের ভাষায়, সমঝোতার কারিগর হিসেবে হেইলির দক্ষতা প্রমাণিত আর সামনের দিনগুলোতে আমেরিকা সরকারকে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্ব মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দারুণ এক নেতা হবেন হেইলি”।
হেইলি বলেছেন, তিনি কাজটা নিতে চান। আর কংগ্রেসের অনুমোদনের আগ পর্যন্ত গভর্নরের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চান।
রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে হেইলি সমর্থন দিয়েছিলেন ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিও এবং পরে টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজকে।
মুসলমানদের আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনায় হেইলি বলেছিলেন, ওই পদক্ষেপ মোটেও ‘আমেরিকাসুলভ’ হবে না। এর জবাবে হেইলিকে অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে ‘খুবই দুর্বল’ বলেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, সাউথ ক্যারোলাইনার মানুষ হেইলিকে নিয়ে লজ্জিত।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রে মন্ত্রীর পদমর্যাদা পান। তবে ট্রাম্প এ পদের মর্যাদা কমিয়ে আনতে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল অনেকের। তার বদলে ‘রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ একজনকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় কূটনৈতিক পেশায় থাকা অনেকে মনে করছেন, যতটা ভাবা হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘকে তার চেয়ে বেশিই গুরুত্ব দেবে।
জাতিসংঘে বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিনিধি নিক ব্রায়ান্ট জানান, নিকি হেইলিকে রাষ্ট্রদূত বানানোর আগে কূটনীতিকদের অনেকেই তাকে চিনতেন না; পররাষ্ট্র নীতি এবং জাতিসংঘ বিষয়ে তার ভাবনা সম্পর্কেও খুব বেশি কিছু জানা যায় না। এ কারণে ট্রাম্পের ঘোষণা আসার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ নারীকে নিয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন অনেকেই।
নিক ব্রায়ান্ট বলেছেন, নিকি হেইলি আর যাই হোন, অন্তত জন বোল্টনের মত হবেন না। এক্ষেত্রে প্রসঙ্গত, বুশ প্রশাসনে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা বোল্টন জাতিসংঘের কড়া সমালোচনার জন্য পরিচিত। একবার তিনি বলেছিলেন, জাতিসংঘ ভবনের উপরের দশ তলা না থাকলেও কোনো সমস্যা তিনি দেখেন না। ওই দশটি তলায় জাতিসংঘ মহাসচিব ও তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের অফিস।
ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন ডেভোসও। দলে বড় অংকের চাঁদা দেওয়া মিশিগানের এই বিলিয়নেয়ার রিপাবলিকান ডেভোস নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলেন, রিপাবলিকান পার্টিতে প্রবেশের অধিকার নেই ট্রাম্পের। ডেভোসের স্বামী অ্যামওয়ে ফরচুনের কর্ণধার, যার সম্পদের পরিমাণ ফোর্বসের হিসেবে অন্তত ৫ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার। রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নদৌড়ে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কার্লি ফিওরিনা, মার্কো রুবিও ও জেব বুশকে সমর্থন দিয়েছিলেন ডেভোস। এর আগে তিনি সবার জন্য ‘কোর এডুকেশন স্ট্যান্ডার্ড’-এ সমর্থন জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পসহ বেশিরভাগ রিপাবলিকান নেতা যার বিপক্ষে।
এতকিছুর পরও ট্রাম্প নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ডেভোসের নাম ঘোষণায় আশা প্রকাশ করেছেন, একটি দুর্দান্ত ও উৎসাহী শিক্ষা কাঠামো নির্মাণের প্রবক্তা হবেন ডেভোস।