যেভাবে নির্বাচিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৫৪
আমেরিকায় রয়েছে পঞ্চাশটি স্টেট আর একটি ফেডারাল ডিস্ট্রিক্ট তথা দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। জনসংখ্যার ভিত্তিতে সব স্টেট ও রাজধানীর জন্য নির্ধারিত রয়েছে আলাদা আলাদা ইলেকট্রোরাল ভোট সংখ্যা।
ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকট্রোরাল ভোট সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পঞ্চান্ন। তারপর টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক। নিয়ম হল জনসংখ্যা যেমনই হোক না কেন, স্টেটগুলির জন্য কমপক্ষে তিনটি ইলেকট্রোরাল ভোট বরাদ্দ রাখতেই হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উইনার-টেক-অল নীতি মেনে চলা হয়। যার মানে যে স্টেটে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি মানুষের ভোট পাবেন, সেই স্টেটের সব ইলেকট্রোরাল ভোট তার হয়ে যাবে।
আমেরিকার সবকটি স্টেট এবং ওয়াশিংটন DC মিলিয়ে মোট ইলেকট্রোরাল ভোট সংখ্যা ৫৩৮. প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রার্থীকে এর অর্ধেকের চেয়ে এক বেশি মানে ২৭০টি ইলেকট্রোরাল ভোট পেতে হবে।
আমেরিকার ভোটারদের ভোটের মূল্য বড় স্টেটগুলির তুলনায় ছোট স্টেটগুলিতে বেশি। যেমন মন্টানার জনসংখ্যা দশ লাখ। ওইয়োমিংয়ে বাস করেন ছ-লাখ মানুষ। কিন্তু, দুটি স্টেটেরই ইলেকট্রোরাল ভোট সংখ্যা তিন। নির্বাচনে ছোট স্টেটগুলি যাতে গুরুত্ব না হারায় সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
এ বার দেখুন এই ম্যাপে চিহ্নিত উনচল্লিশটি স্টেট ও ওয়াশিংটন DC-তে কেউ জিতে গেলে তিনি ২৭০টি ইলেকট্রোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। কিন্তু, এই স্টেটগুলিতে মাত্র বাইশ শতাংশ মানুষ বাস করেন।
ধরা যাক কোনও প্রার্থী জনবহুল ১১টি স্টেটের সব মানুষের ভোট মানে আটাত্তর শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং জনবিরল ৩৯টি স্টেটের বাইশ শতাংশ ভোটের দশ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে, গোটা দেশের ভোটারদের অষ্টআশি শতাংশ মানুষের ভোট পেয়েও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। মাত্র বারো শতাংশ ভোট পেয়েই অন্য প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন।
সাধারণ মানুষের ভোট বেশি পেয়েও ইলেকট্রোরাল ভোটের নিয়মের গেরোয় প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি, আমেরিকায় এমন উদাহরণ আছে।
২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট আল গোর পান ৪৮.৪% ভোট। রিপাবলিকান বুশ তাঁর চেয়ে কম ৪৭.৯% পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকট্রোরাল ভোট সংখ্যার হিসাবে আল গোরকে টেক্কা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বনে যান।
১৮৮৮ এবং ১৮৭৬ সালেও পপুলার ভোটে পিছিয়ে থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে স্টেটে যে দল যতগুলি ইলেকট্রোরাল ভোট হাসিল করে, সেই দলের ততজন প্রতিনিধি আবার সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে ভোট দেন।
অর্থাৎ, কোনও প্রার্থী যদি ২৭০টি ইলেকট্রোরাল ভোট পান তা হলে তাঁর দলের ২৭০ জন প্রতিনিধির দেওয়া সরাসরি ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে চাইলে ইলেকট্রোরাল কলেজের কোনও দলীয় প্রতিনিধি নিজের দলের বদলে অন্য দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এঁদের বলা হয় ফেথলেস ইলেক্টর বা বেইমান ইলেক্টর। আমেরিকায় এরকম বেইমানির একশো সাতান্নটি উদাহরণ আছে। তবে, তাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদলের নজির নেই।