যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:০৯
প্রায় সব নারীই জীবনের কোনো না কোনো সময় শিকার হন যৌন হয়রানির। ছোটখাটো ঘটনাগুলো অনেকসময় উপেক্ষা করেন নারীরা। বড় ঘটনাগুলো রেখে যায় বড় ধরনের ক্ষত। কেউ প্রতিবাদ করেন, কেউবা গুমরে মরেন ভেতরে-ভেতরে। উন্নত, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল সব দেশেই প্রায় এক এই চিত্রটা।
যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ-বিষয়ক বিভিন্ন জরিপ ও পরিসংখ্যান বলছে, নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকে—এমন সব জায়গায়ই কমবেশি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। সে তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় বেশি বিপজ্জনক, তা বলা যাবে না। যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান সঠিকভাবে তুলে ধরাটা কঠিন। অ্যাসোসিয়েশনস অব আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ বলছে, স্নাতকপূর্ব শিক্ষার্থীদের ২৩ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ বলছে, এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওই জরিপ বলছে, যৌন হয়রানির শিকার মেয়েরা কমই মুখ খোলেন। অনেক দ্বিধা ও সময় পেরিয়ে যখন তাঁরা প্রতিবাদ করেন, তখন অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
যৌন হয়রানির বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে নতুন শিক্ষার্থীদের বেলায়। কলেজগুলোর আইনি পরামর্শ-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ট্রেনইডির সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্যাথরিন ন্যাশ বলেন, স্কুল শুরু হওয়ার সময়টা (পাশ্চাত্যে স্কুল শেষ করে কলেজে ঢোকার সময়টাই এ হিসেবে পরিচিত) বিশেষ করে থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের মতো উৎসবগুলোতে এ ধরনের যৌন হয়রানি বেশি ঘটে। নতুন শিক্ষার্থীরাই যৌন হয়রানির শিকার বেশি হন। ন্যাশ বলেন, কৈশোর পার হওয়া এসব শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো অ্যালকোহল বা মদ্যপান করেন। ৭৫ শতাংশ যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে মদ্যপ অবস্থায়।
মেয়েরা যারা কিশোরী বা তরুণী, বেশি যৌন হয়রানিতে বেশি পড়ে তারাই। মেয়েরা কীভাবে সাবধান হতে পারেন, কীভাবে সামলাতে পারেন পরিস্থিতি, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক করেছে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনমতো শাস্তিও দিতে পারবে অপরাধীদের।
এ বছরের ১ আগস্ট যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে একটি আইন কার্যকর করা হয়েছে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে। ওই আইন অনুসারে, আগস্ট মাসের শুরুতেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার ৭০০ নতুন শিক্ষার্থীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার প্রথম ১০ দিনের মধ্যেই এই প্রশিক্ষণ নেন শিক্ষার্থীরা।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থী টনি বার্টন নিচ্ছেন এই প্রশিক্ষণ। তিনি বলেন, তাঁর প্রশিক্ষণের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল উপস্থিত বুদ্ধি খাটানো। সবার ক্ষেত্রে যে একই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা নয়। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ না করলে অনেকে প্রশ্রয় পায়। ভাবে, এতে সম্মতি আছে মেয়েটির। তাই সুকৌশলে প্রতিবাদ করার শিক্ষাটাও দেওয়া হয় মেয়েদের।
ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম যৌন হয়রানি প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ আইন পাস হয়। গত বছর জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ-বিষয়ক প্রশিক্ষণকে বাধ্যতামূলক করা হয়। যৌন হয়রানি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে হোয়াইট হাউসের নিজস্ব টাস্কফোর্স রয়েছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট