ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ধর্মগুরু, নিখোঁজ নারী শিষ্যরা
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০১৮, ১৪:৩২
ভারতে স্বঘোষিত ধর্মগুরু দাতী মহারাজ এর আশ্রম থেকে ৬০০ নারী শিষ্য নিখোঁজ হয়েছেন। ঐ ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসার পর দক্ষিণ দিল্লির ফতেপুর এলাকায় তার আশ্রম ‘শ্রী শান্তি ক্ষেত্র’ এর ৬০০ নারী শিষ্যের কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ।
গত ১১ জুন (সোমবার) দাতী মহারাজের বিরুদ্ধে তার আশ্রমের এক নারী শিষ্য ধর্ষণের অভিযোগ তুলেন। স্থানীয় ফতেপুর বেরি থানায় ধর্ষণের মামলা করেছেন ঐ নারী। মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
অভিযোগকারী তরুণীর (২৫) ভাষ্য, তিনি প্রায় এক দশক ধরে দাতী মহারাজের শিষ্য ছিলেন। ২০১৬ সালে দাতী মহারাজের এক নারী শিষ্য তাকে (অভিযোগকারী) জোর করে ধর্মগুরুর কক্ষে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর ঐ ধর্মগুরু ও তার দুই সঙ্গী তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার পর তিনি আশ্রম থেকে পালিয়ে যান।
তরুণীর অভিযোগ, অন্য নারী শিষ্যদেরও শ্লীলতাহানি করতেন দাতী মহারাজ।
অভিযোগকারী তরুণী জানান, ধর্ষণের মামলা দায়ের করার পর ধর্মগুরুর শিষ্যরা তাকে মামলা তুলে নিতে বলেছেন। না তুললে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দাতী মহারাজকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে দিল্লির মহিলা কমিশন। গত ১৭ জুন (রবিবার) রাজস্থানে দাতী মহারাজের আশ্রমে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু দাতী মহারাজ এর আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যান। এমনকি দাতী মহারাজের আশ্রমে থাকা ৬০০ নারী শিষ্যেরও কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ। নারী শিষ্যরা নিজেদের ঘরে ফিরে গেছেন, নাকি তাদের অন্যত্র পাচার করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দাতী মহারাজের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিশও জারি করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, এর আগে নারী শিষ্যদের ধর্ষণের দায়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন কথিত সাধু ও ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরুমিত রাম রহিম সিং ইনসান। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে তিনি কারাবন্দী রয়েছেন। রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে তারই আশ্রমের দুই সাধ্বী ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। গত ২৫ আগস্ট রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এরপর উত্তর প্রদেশের বস্তি জেলার সন্তু কুটির আশ্রমে স্বঘোষিত আরেক ধর্মগুরু স্বামী সচ্চিদানন্দ ও দিল্লির রোহিণী এলাকার একটি আশ্রমের প্রধান বাবা বীরেন্দ্র দেব দীক্ষিত এর বিরুদ্ধেও আশ্রমের সাধ্বী ও নারী শিষ্যদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের ‘ভণ্ড’ বাবাদের একটি তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে আখড়াদের একটি বড় সংগঠন অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদ। এই আখাড়া পরিষদ প্রথম প্রকাশ করে ভণ্ড বাবাদের তালিকা। তখন ওই তালিকায় ছিল ১৪ জন ভণ্ড বাবার নাম। এরপর সেই তালিকায় যুক্ত হয় আরও তিন ভণ্ড বাবার নাম। তারা হলেন দিল্লির বীরেন্দ্র দীক্ষিত, উত্তর প্রদেশের বস্তির সচ্চিদানন্দ সরস্বতী ও এলাহাবাদের ত্রিকাল ভগবান। তালিকাভুক্ত মোট ১৭ জন ভণ্ড বাবা হলেন, গুরুমিত রাম রহিম সিং, আশারাম বাপু, রাধে মা, সচ্চিদানন্দ গিরি, স্বামী ওম, নির্মল বাবা, ইচ্ছাধারী বাবা, স্বামী অসীমানন্দ, নারায়ণ সাঁই, রামপাল, আচার্য কুশমুনি, ব্রাহাস্পতি গিরি, ওম নম শিবায় বাবা, মালখান সিং, বীরেন্দ্র দীক্ষিত, সচ্চিদানন্দ সরস্বতী ও ত্রিকাল ভগবান। এবার দিল্লির দাতী মহারাজের নামও ভণ্ড বাবাদের তালিকায় সংযোজিত হলো।