আমাদের লড়াইটা বাইরে, আর ওদেরটা অন্দরমহলে
প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৮, ২০:২৮
আমরা চাই খুশনুরা প্রতিষ্ঠিত হোক। আমাদের লড়াইটা বাইরের জগতের সঙ্গে। ওদের লড়াইটা একেবারে ঘরের ভিতরে-বললেন পশ্চিমবঙ্গের সারদা বিদ্যাভবন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুরমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৫০ সালে এন্টালির ডক্টর সুরেশ সরকার রোডে নির্মিত হয় মেয়েদের স্কুল সারদা বিদ্যাভবন। ২০১৬ সাল থেকে ছাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় স্কুলটি। সেই সাথে ডেভলপারদের চোখ পড়ে স্কুলটিতে। রানী রাসমনির করা ঐ স্কুলটি বর্তমানে ‘হেরিটেজ গ্রেড ওয়ানে’র মর্যাদাপ্রাপ্ত। হেরিটেজ কমিশনে গিয়ে তাই ডেভলপারদের হাত থেকে বাঁচানো গিয়েছে স্কুলটি। কিন্তু ছাত্রী সংকট সমস্যা থেকেই গেলো। ছাত্রীসংখ্যা টেনেটুনে যেখানে ছিল ১৫০, তা নেমে দাঁড়িয়েছিল ৮০-তে।
এন্টালির মতো এলাকায় বাংলা মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের পড়তে পাঠাতে অনিচ্ছুক ছিলেন বাবা-মায়েরা। আর দূর থেকে যারা আসতে চান, সেখানে যাতায়াতের খরচের জন্য সন্তানদের ঐ স্কুলে দিতে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা।
২০১৭ সালে তাই মাঠে নেমে স্কুল বাঁচানোর লড়াই শুরু করেন ঐ স্কুলের দুই শিক্ষিকা অপর্ণা বিশ্বাস এবং অজন্তা রায়। বিশেষ করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফের স্কুলে আনা যায় কীনা সে নিয়েই কাজ করতে লাগলেন শিক্ষকরা। সঙ্গে ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা সুরমা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষিকা মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়, মীনাক্ষী দাশগুপ্ত, গোপা পাণ্ডে। সে লড়াইয়ের একজন ছাত্রী খুশনু।
খুশনুর বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। বিয়ের আগে কিশোরী স্ত্রী স্বামীকে শর্ত দিয়েছিল, তাকে পড়তে দিতে হবে। স্বামী কথা রাখেননি। তাই ডিভোর্সের মামলা করেছে দশম শ্রেণির ছাত্রী খুশনু পরভিন। তিন বছরের কন্যাসন্তানের মা গুলশান বলেন, পড়াশোনা শিখে নিজের রোজগারে মেয়েকে মানুষ করে দেখিয়ে দেব। এই দেখিয়ে দেয়ার পণ নিয়েছে গুলশন খাতুন এবং সানিয়া আহমেদও।
খুশনু, গুলশান আর সানিয়াদের লিস্টটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। তাদের লড়াইয়ের কাছে নিজেদের সংগ্রামটাকে ছোট মনে করছেন স্কুলের শিক্ষকরা। বরং ছাত্রীদের নিত্যদিনের লড়াইয়ে শরিক হতে পেরেই তারা বেজায় খুশি। ছাত্রীদের যাতায়াত খরচ মেটাতে নিজেরাই স্কুলবাস ঠিক করেছেন। স্কুলের তহবিল আর আর নিজেদের বেতনের একাংশ দিয়ে প্রতি মাসে ২৩ হাজার টাকা বাসের ভাড়া মেটাচ্ছেন এই মহিয়সী শিক্ষকরা।
স্কুল শিক্ষিকা অপর্ণাদেবী বলেন, একটা বাসে ছাত্রীরা গাদাগাদি করে আসে। আরও একটা বাস পেলে আরও ছাত্রীকে স্কুলে আনতে পারতাম। অত টাকা কোথায়!
সূত্র: আনন্দবাজার