রোহিঙ্গা নারীদের মুখে মিয়ানমার সেনাদের ধর্ষণের বিবরণ
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩১
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সৈন্যরা হত্যা, লুটপাট, জ্বালাও পোড়াওয়ের পাশাপাশি ব্যাপক হারে যে যৌন সহিংসতা চালাচ্ছে, তার ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে এসেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে।
১৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত ৩৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে যে অভিযান চালাচ্ছে, তার গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ একটি অংশ এই ব্যাপক হারে ধর্ষণ।
এইআরডব্লিউর ‘জরুরি অবস্থায় নারীদের অধিকার’ বিষয়ক গবেষক স্কাই হুইলার তার প্রতিবেদনে বলেছেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সহিংসতার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। যারা পালাতে পারেনি, তাদের অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছে। মিয়ানমারের মাটি থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের চিরতরে নিধন করার অভিযানে সে দেশের সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা একটি অন্যতম অস্ত্র হলো গণধর্ষণ। তবে ধর্ষণের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনী সীমাহীন নৃশংসতা ও নারকীয় বর্বরতার যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে, তা মানব মনের ভয়াবহ দুঃস্বপ্নকেও হার মানায়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, শুধু ধর্ষণ আর ধরপাকড়েই অভিযান সীমাবদ্ধ ছিল না। অভিযানের সময় নিরপরাধ মানুষজনকে ধরে আগুন দেওয়া ঘরগুলোতে ছুঁড়ে ফেলা হতো। তারা সেখানেই জীবন্ত জ্বলে-পুড়ে মারা যেত। এমনকি পলায়নপর রোহিঙ্গাদের পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিছু নারী-পুরুষকে একসঙ্গে আটক করে পুরুষদের আলাদা করে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর নারীদের ওপর নেমে আসে গণধর্ষণের বিভীষিকা। বাবার সামনে মেয়েকে, মেয়ের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। গণধর্ষণের তীব্রতা সইতে না পেরে অনেক নারীই মারা যান।
স্কাই হুইলার আরও জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা অগণিত নারী ও কিশোরী ভয়াবহ মানসিক বিকলতা ভুগছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক ফরটি রাইটস যৌথভাবে ৩০ পৃষ্ঠার আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রাখাইনে নির্যাতনের শিকার দুইশ নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি ওই প্রতিবেদনেও মিয়ানমার সেনাদের হাতে রোহিঙ্গা গণধর্ষণের ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে আসে। এতে বলা হয়, গেল বছর ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এ বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক ও পদ্ধতিগত আক্রমণ চালায়।
গত আগস্টের শেষের দিকে তিনটি গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেখান থেকে পালিয়ে আসা এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সবাইকে হত্যা করা শেষে লাশগুলো স্তূপ করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সেনারা। নারীদের ধরে এনে আলাদা করে চালানো হয় গণধর্ষণ। প্রকৃত নাগরিক হলেই ফিরতে পারবে রোহিঙ্গারা। এবার রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী উদ্ভট দাবি করছে।
১৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) তারা বলেছে, একমাত্র প্রকৃত নাগরিক' হলেই দেশটিতে ফিরতে পারবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। এতে নির্যাতিত এসব মানুষের প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির সরকারের কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নতুন করে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
ফেসবুকে দেওয়া বিবৃতিতে সেনাপ্রধান মিন অং হদ্মাইং লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। এক্ষেত্রে সবাইকে ফেরারও সুযোগ দেবে না সরকার। কেননা এর আগে থেকেই মিয়ানমারে অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে। এ ছাড়া রাখাইনে অবস্থানরত বৌদ্ধদের ওপর এই বিষয়টি নির্ভর করছে।
এমনকি আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যার ব্যাপারে বাংলাদেশের দাবি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মিয়ানমার সেনাপ্রধান। দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের সাংবিধানিকভাবে এখনও নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার।
খবর : এএফপি ও নিউইয়র্কস টাইম