রাখাইন সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা ও উদ্বেগ
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩২
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহায়তার জন্য সেখানে মানবিক সাহায্যকারীদের প্রবেশ করতে দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) আল জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিথার নওয়ার্ট ৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইনে গণহারে রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বেসামরিক লোকজন কর্তৃক সহিংসতাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে বড় ধরনের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে।
হিথার নওয়ার্ট বলেন, ‘মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রক্তক্ষয়ী হামলা ফের নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে স্থানীয় (রাখাইন) লোকজনের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর আরও হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো আমরাও আহ্বান জানাই।’
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি গতকাল দাবি করেন, তার সরকার রাখাইন রাজ্যের প্রত্যেকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’-এর সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন সু চি। তবে তিনি রাখাইনে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি।
রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর গতবছর ২৫ অক্টোবর থেকে প্রায় এক লাখ ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ আর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে সহায়-সম্বল হারানো এসব ‘দেশহীন’ শরণার্থীর ভাষ্যে।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।