অপহরণকারীর সাথে বিয়েই যেখানে রীতি
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ০১:১৮
বিয়ে ও অপহরণ বিষয় দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত প্রেক্ষাপট। কিন্তু আফ্রিকার দেশ মালিতে সেটাই প্রথাগত নিয়ম। সেখানে অপহরণ করে বিয়ে করাটাকে দীর্ঘ দিন রীতি হিসেবে গণ্য করে চলে আসছে সবাই। যেখানে কনের ইচ্ছার অনিচ্ছার কোনো বালাই নেই। পছন্দ হোক বা না হোক অপহরণকারীর সঙ্গেই কনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এমনই এক অমানবিক তথ্য ওঠে এসেছে।
১৫ বছরের এক স্কুলছাত্রী ‘ফাতামাতা’ মালির মাহাউ নামক স্থানের একটি বাজার থেকে অপহরণের শিকার হয়। নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় ফাতামাতা। কিন্তু কিছুদিন পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তখন সে জানতে পারে তার অপহরণকারীকেই বিয়ে করতে হবে ফাতামাতার। সে এখন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত। আর এ ঘটনার শুরুটা করেছিল ফাতামাতারই ভাই। অপহরণকারীর বোনকে এর আগে অপহরণের প্রথা অনুসরণ করে বিয়ে করে সে। প্রতিশোধ নিতেই পাল্টা ফাতামাতাকে অপহরণ করা হয়। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ফাতামাতা বলে, আমি খুবই ভীত, আমি সবসময়ই কাঁদি। আমি ওই লোকটাকে পছন্দ করি না। এ রকম জোরপূর্বক বিয়ের রীতিকে আমি ঘৃণা করি।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য মতে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মালিতে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৫-১৮ বছরের মধ্যেই প্রতি ৭ জনে একজন বাল্যবিয়ে করতে বাধ্য হন।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা জানান, মালিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা অপহরণের পর বিয়ের প্রথা। এসব কন্যাশিশুকে জোর করে বিয়ের পর গৃহস্থালি কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তাদের নিজেদের পরিবারে যেতে দেওয়া হয় না। খুব কম মেয়েদেরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
অবশ্য ফাতামাতার চূড়ান্ত পরিণতি সুখকর, শেষ পর্যন্ত তাকে আর অমতে বিয়ে করতে হয়নি। তবে অনেককেই এ ভাগ্য মেনে নিতে হয়। ফাতামাতা এক মাস অপহরণকারীর কাছে আটক থাকার পর স্থানীয় অধিবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত চেষ্টায় মুক্তি পায় সে। মুক্তির পর বাল্যবিবাহ ঠেকানোর প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে ফাতামাতা।
তার অভিব্যক্তি এরকম যে, ‘আমি স্কুলে ফিরতে পেরে খুবই খুশি। আমি আমার ভবিষ্যৎ ফিরে পেয়েছি। হয়তো একদিন নিজের পছন্দে বিয়েও করতে পারব।’