প্রথমে লিঙ্গ বদল, অতঃপর বিয়ে
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩৬
একজন আগে ছিলেন ছেলে, লিঙ্গ বদলে হলেন মেয়ে। আরেকজন ছিলেন মেয়ে, এখন তিনি ছেলে। দেখা একই ক্লিনিকে। সেখান থেকেই ভালো লাগা। এরপর বিয়ের সিদ্ধান্ত।
চমকপ্রদ এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মুম্বাইতে। ২২ আগস্ট (মঙ্গলবার) এই জুটি জানালেন যে, বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। ঘোষণাও দিলেন, একেবারে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করার।
এদের একজনের নাম আরাব আপ্পুকুটান। জন্মেছিলেন মেয়ে হয়ে। কিন্তু এখন লিঙ্গ বদলে ছেলে হয়ে গেছেন।
আর সুকন্যা কৃষ্ণা জন্মেছিলেন ছেলে হয়ে। এখন লিঙ্গ পালটে হয়ে গেছেন মেয়ে। বছর তিনেক আগে মুম্বইয়ের একটি লিঙ্গ বদল ক্লিনিকের ওয়েটিং রুমে দেখা। দু'জনই এসেছিলেন সার্জারি করতে। সেখানেই নাম্বার দেয়া-নেয়া। সেদিন থেকেই পরস্পরের প্রতি টানটা উভয়েই খুব বুঝতে পারছিলেন।
‘‘সুকন্যাকে আইনগতভাবেই বিয়ে করতে চাই। আর বাকি জীবনটা ওর সঙ্গে কাটিয়ে দিতে চাই।” বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন ৪৬ বছর বয়সি আরাব।
লিঙ্গ বদলের আগের তিন দশকে প্রতি মুহূর্তে নিজের লিঙ্গ পরিচিতি নিয়ে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন তিনি।
‘‘সরকারি নথিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপর কেরালায় গিয়ে বিয়ে করব।” জানালেন আরাব।
আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন এই জুটি।
‘‘হিজড়াসহ সব রকমের ট্রান্সজেন্ডাররা প্রতিমুহূর্তে সমাজে নিগৃহীত হন। তাদের পরিবারও সব সময় শঙ্কিত থাকেন বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু সমাজে পরিবর্তন আসা দরকার।” বললেন কৃষ্ণা।
‘হিজড়া’-রা রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হলেও ভারতের রক্ষণশীল সমাজে তাঁরা বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্যের কারণে তাঁরা ভিক্ষা বা পতিতাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হন।
অস্ত্রোপচারের পর থেকে আরাবও এমন নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কাজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। দুবাইয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বিধি বাম। ভিসা মেলেনি।
২১ বছর বয়সি কৃষ্ণা জানালেন, মেয়ে হবার বাসনা জানানোর পর তাঁর বাবা-মা-ই তাঁকে হরমোন ইনজেকশন দিতে থাকেন। আরাবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানালেন, অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু পিছ পা হননি।
‘‘মানুষের কটুক্তি ও সমালোচনা শুনলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটার মতো লাগে। তাই আমাদের গল্প সবাইকে জানাতে চাই। তরুণ ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।”
গতানুগতিক হিন্দুমতেইবিয়ে সম্পন্ন করতে চায় এই জুটি। বিয়ের পর তাঁরা একটি শিশুও দত্তক নিতে চান। ‘‘আমাদের জৈবিক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু আমরা একটি বাচ্চা চাই। তাই দত্তক নেব। একটা সুখী ভবিষ্যতের জন্য আমরা সব বদলে দিতে চাই এবং একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার গঠন করতে চাই।”
সূত্র: ডয়েচ ভেলে