ওমানে মানবেতর জীবনে বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীরা

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৬, ২১:৩৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

চরম নির্যাতন আর আবমাননার মধ্যে ওমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীরা৷ তাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা হয়৷ অনেকেই দেশে ফিরতে চাইলেও ফিরতে পরছেন না৷ বন্দি হয়ে আছেন এই নারকীয় পরিবেশে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে৷ 

কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশি কয়েকজন নারী গৃহকর্মীর সাক্ষাত্‍কারও প্রকাশ করেছে এইচআরডাব্লিউ৷ ৫৯ জন অভিবাসী গৃহকর্মীর সাক্ষাত্‍কার নিয়েছে তারা৷ এর মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, তাদের পাচার করে জোর করে কাজে বাধ্য করা হচ্ছে৷ তাদের কর্মক্ষেত্রের মালিকরাও বলেছেন, তাদের তারা কিনে নিয়েছেন৷

তাদের একজন আসমা ২০১৫ সালের মে মাসে আরব আমিরাতে যান৷ তিনি জানান, তার রিক্রুটিং এজেন্ট তাকে একজন ওমানি ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন, এরপর তার পাসপোর্ট আটকে রেখে ওমানে নিয়ে যান৷ সেখানে তার বাড়িতে দিনে ২১ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হতো, ঠিক মতো খাবার দেয়া হতো না এবং যৌন হয়রানি করা হতো৷ আসমাকে সেখানে এক টাকাও বেতন দেয়া হয়নি৷ ওই ওমানি ব্যক্তি আসমাকে জানায়, সে ১ হাজার ৫৬০ রিয়েল (৪ হাজার ৫২ ডলার) দিয়ে তাকে (আসমা) কিনেছে৷ এখান থেকে মুক্তি চাইলে সেই টাকা আসমাকে দিতে হবে৷

আরেক বাংলাদেশি গৃহকর্মী বাবলি জনিয়েছেন, তাকে ওমানে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে৷ তার কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না৷ বসার সময় পর্যন্ত ছিল না৷ তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানকার মালিক সবসময় তাকে গালাগালি করতো৷

পারভীন নামে একজন জানিয়েছেন, ওমানের বন্দর নগরী সোহারে কাজ করতেন তিনি৷ সেখানে ১৬ মাস কাজ করেছেন৷ প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো৷ বিনিময়ে তাকে প্রতিমাসে মাত্র ৫০ ওমানি রিয়েল (১৩০ ডলার) দেওয়া হতো৷

আরেক বাংলাদেশি গৃহকর্মী মমতা জানান, তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন সেখানকার মালিক তাকে মারধর করতেন৷ তিনি পুলিশের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ তাকে আবার ওই মহিলার কাছেই ফেরত পাঠিয়েছিল৷ এরপর তাকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন ওই মহিলা৷ একবার তাকে আট দিন ধরে একটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছিল৷ তখন তাকে খেজুর পাতা এবং পানি ছাড়া আর কিছু খেতে দেওয়া হয়নি৷

বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ওমানে ১ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন৷ ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইথিওপিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী গৃহকর্মীরা উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান৷ তাদের মধ্যে কিছু কর্মী বাস্তবে একটি ভালো কাজের সন্ধান পেলেও বাকিরা চরম অমানবিক অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হন৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমানের অনেক বাড়িতে বিদেশি গৃহকর্মীরা বন্দি রয়েছেন৷ দাসত্ব যৌন নির্যাতন, মারধর, বেতন না দেয়ার মতো অনেক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা৷ ওমানের কাফালা পদ্ধতির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের সুযোগ পান মালিকরা৷ 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত