‘আত্মহারা হয়ে আমি যেন অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম’
প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৮, ১৯:৩১
জাহানারা আলম জাতীয় দলের পেসার। শেষের দিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আছে তার দক্ষতা। এশিয়া কাপের ঐতিহাসিক জয়ে তার বড় ইনিংস খেলার প্রয়োজন অবশ্য হয়নি। তবে তার এক বলে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ দুটি রানে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ইনিংসের দুই বল থাকতে ক্রিজে নামেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। এর আগে মুখোমুখি হতে হয় নড়বড়ে পরিস্থিতির। পঞ্চম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন রুমানা। তখনই গুরু দায়িত্ব পালনে স্ট্রাইকে চলে আসেন জাহানারা। গুরু দায়িত্ব পালনে অবিচল ছিলেন। তাইতো তার ব্যাটেই এসেছে স্বপ্নের জয়।
ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড উইকেটে বল পাঠিয়েই নেন দ্রুত দুই রান। অবিশ্বাস্য এক অর্জন। বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে তাই ক্রিজে ব্যাট ছুঁয়েই মাটিতে চুমু খেয়ে নেন জাহানারা। নিজেও যেন বিশ্বাস্য করতে পারছিলেন না। কয়েক সেকেন্ড পর উঠেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেললেন। যেন নারী ক্রিকেটারদের প্রতীকী এক ছবি।
এমন মুহূর্ত সামলে নিতে কী ভাবছিলেন জাহানারা? রবিবার রাতে মুঠোফোনে নিজের সেই পরিকল্পনার কথা জানালেন ২৫ বছর বয়সী পেসার, ‘মাত্র দুই বল থাকতে আমি ক্রিজে নেমেছি। মাথায় চিন্তা ছিল, একটা বল হলেও যেন পাই। কারণ এর আগে বেশকিছু ম্যাচ খুব কাছে গিয়েও হেরেছি। আমি অপরপ্রান্তে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছি! শেষ বলে আমার লক্ষ্য ছিল সোজা বল আসলে সোজা ব্যাটে ওভার বাউন্ডারি খেলবো। তাতে করে ছয় না হলেও চার হয়ে যাবে। আর বল সোজা না করে কাটার করলে গ্যাপে শট খেলবো, যাতে দুটি রান আসে।’
জাহানারা যখন পরিকল্পনা সাজাতে তৈরি। অপরপ্রান্তে বোলার হিসেবে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত। ২৯ বছর বয়সী এই অফস্পিনার হাল্কার ওপর লেগস্ট্যাম্পে বল করেছিলেন। জাহানারা মিড উইকেটে বলটি ঠেলেই দেন এক ছুট। সেই মুহূর্তের কথা ধরিয়ে দিতেই জাহানারা বলেন, ‘ও(হারমানপ্রীত) বলটা খুব বেশি ফ্লাইটও দেয় নাই, জোরের ওপরও করেনি। বলটি লেগ স্ট্যাম্প ক্রস করে যাচ্ছিল। আমি শুধু এগিয়ে এসে মিড উইকেটের দিকে ব্যাট চালিয়েছি। প্রথম রানটা নেওয়ার পরেই আমার মাথায় আসে দ্বিতীয় রানে প্রয়োজন হলে ডাইভও দিবো। তাতে যে ঝুঁকিই আসুক না কেন।’
শেষ বলে এমন সাহসিকতার পরিচয় শুধু অভিজ্ঞতার কারণেই? এমন প্রশ্নে জাহানারার উত্তর, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছু ম্যাচ আমি এভাবে ব্যাটিং করে জিতিয়েছি। এই অভিজ্ঞতাই আমাকে শেষ বলে সাহস যুগিয়েছে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারবো। এর আগে বেশ কিছু ম্যাচে আমি ক্রিজে থাকলে স্ট্রাইকে ছিলাম না। শেষ মুহূর্তে দলকে পরাজিত হতে দেখেছি। আজ যখন (রবিবার) স্ট্রাইকে ছিলাম, আমার নিজের প্রতি আস্থাই জয় পেতে আমাকে সাহসী করে তুলেছে।’
জয়সূচক রান নিয়ে ডানা মেলেছিলেন জাহানারা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এমন আনন্দ আর কিছুতেই পাননি। নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে জাহানারা বলেছেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে এরচেয়ে ভালো জয়ের অনুভূতি আর নেই। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ম্যাচ জিতে ব্যাট ফেলে মাটিতে চুমু খেয়েছি। পরে দুই হাত উচিয়ে আমি দৌড় দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে আমার মাথায় তখন কিছু ছিল না। আত্মহারা হয়ে আমি যেন অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম! কী করেছি, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এই ভালো অনুভূতিগুলো অনেকদিন বয়ে বেড়াতে পারবো, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগছে।’